নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ষা শুরু হয়েছে কলকাতায়। প্রায় একইসঙ্গে বড়পর্দায় মুক্তি পেল পরিচালক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি 'মানিকবাবুর মেঘ'। বিশ্বব্যাপী ৩৮টি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ঘুরে ১৪টি পুরষ্কার ও নমিনেশন পেয়েছে এই ছবি। প্রিমিয়ার হয়েছে মোট ৫টি মহাদেশে। এবার দেশজুড়ে মুক্তি পেল এই‌ ছবি। সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার এক নামি‌ প্রেক্ষাগৃহে আয়োজন করা হয়েছিল ছবির প্রিমিয়ার। অনুষ্ঠানে ছবির পরিচালক ছাড়াও হাজির ছিলেন প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় এবং মোনালিসা মুখোপাধ্যায়। ছিলেন ছবির নিবেদক তথা অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এছাড়াও ছবি দেখতে হাজির হয়েছিলেন রজতাভ দত্ত,‌ অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর মতো টলিপাড়ার একাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। 

অনুষ্ঠানে ছবির মুখ্য অভিনেতা চন্দন সেনকে আজকাল ডট ইন-এর তরফে‌ প্রশ্ন করা হয়েছিল 'মানিকবাবুর মেঘ'-এর মতো কম সংলাপের অন্য ধারার ছবি সাধারণ মানুষ কতটা গ্রহণ করবে বলে তিনি মনে করেন? "দেখুন, এই ছবি একটি নিটোল প্রেমের গল্প। বিদেশে দু'দশটা পুরস্কার পেয়েছে বলে অনেকে তো মনে করছেন বিরাট ব্যাপার, জটিল বিষয়। বিশ্বাস করুন, সেরকম কিছু নয়। এ ছবি ভালবাসার কথা বলে। সকলের জন্য এই ছবি। আর একটা কথা বলি, কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার 'সারথী' ছবিটি দেখতে এসেছিল এক ব্যক্তি যিনি পেশায় টোটো চালক। ইচ্ছে করেই তাঁর পেশাটা বললাম সমাজে অর্থনৈতিক স্তরে তাঁর অবস্থানটা বোঝানোর জন্য। তিনি সেই ছবি দেখে আমাকে জানিয়েছিলেন, আবার দেখবেন সেই ছবি। বোঝাতে চাইছি, অন্য রকম হলেও ভাল ছবি হলে দর্শক কিন্তু তা দেখেন। 'মানিকবাবুর মেঘ'ও সেই গোত্রের ছবি"- সাফ কথা অভিনেতর।

আর মেঘ? 'মানিকবাবু'র মতো ব্যক্তি চন্দন সেনের কাছে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? জবাব আসে, "ভীষণ স্পেশ্যাল। ছোটবেলায় মেঘ দেখতে ভাল লাগেনি এমন মানুষ বিরল। ছোটবেলায় মেঘের মধ্যে বিভিন্ন পশুপাখি কিংবা মানুষের মুখের আদল আমরা সকলেই করেছি। বড় হয়ে সেই মেঘের রূপের তাৎপর্যটা বদলে যায়"। কথা শেষে তাঁর সংযোজন, "সমাজের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানিকবাবুদের বলব, আরও একটু ভালবাসুন।‌ চেষ্টা করেই দেখুন না। ভালবাসার থেকে সুন্দর আর কিছুই নেই"।

ছবির পরিচালক অভিনন্দন অল্প কথায় বললেন, " বর্তমানে বিশ্বের দরবারে আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর মতো মতো মাত্র কয়েকজন বাঙালি পরিচালকের ছবি পৌঁছয়, প্রশংসিত হয়। বিদেশের মাটির মতো এ দেশেও যদি 'মানিকবাবুর মেঘ' গৃহীত হয়, তাহলে একটা বার্তা পৌঁছবে এরকম ছবি আরও তৈরি হতে পারে। ফের সাহস পাব এ ধরনের ছবি তৈরি করার। যদি এ ছবি মানুষের ভাল লাগে সেটা আখেরে বাংলা ছবির লাভ। এটুকুই বলার"।

 স্পষ্ট কথায় ছবির নিবেদক তথা অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, "দেখুন, আমাদের এখন ছবি নিয়ে বহু কথা বলতে হয় বলেই বলি। একটা ছবির মূল উদ্দেশ্য থাকে একজন দর্শককে অথবা দর্শককুলকে সে ভাবাতে পারল‌ কি না, কোনও অভিজ্ঞতার শরিক কিংবা‌ কোনও মুহূর্ত উপহার দিতে সক্ষম হল কি‌ না।‌ সেটাই একটি ছবির পরীক্ষা। আমি দু'বার 'মানিকবাবুর মেঘ' দেখেছি। এই ছবি কিন্তু আমাকে সেই অভিজ্ঞতায় শামিল করেছে। সেই হিসাবে 'মানিকবাবুর মেঘ' আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি ছবি"। বহু দর্শক, সমালোচকরা বলেছেন,' এ‌ রকম ছবি তৈরি করতে বুকের পাটা লাগে'।‌ কেন? কাটা কাটা ভাষায় অনির্বাণের স্পষ্ট জবাব, "এ কথা উঠছে কারণ আমাদের দেশে আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিনেমাকে অর্থের নিরিখে মাপা হয়। আমার এখনও এই শহরের মানুষের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে বাংলা ভাষা বলা মানুষের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে যে তাঁরা এই ছবির বিচার করবেন ছবিটা কেমন শুধু তারই নিক্তিতে‌। অর্থের নিরিখে নয়"।

ছবির অন্যতম প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় এই 'বুকের পাটা'র প্রসঙ্গে হেসে বললেন, "কিচ্ছু না ভেবে এই ছবি বানিয়েছি। যদি ভাবতে বসতাম, তা হলে আর তৈরি করতে পারতাম না। একটা ছবি তৈরি করতে গেলে সেটা যে সব সময় অঙ্ক কষে, হিসেব-নিকেশ করে বানাতে হবে, ব্যবসায়িক বিষয়টিকে মাথায় রেখে বানাতে হবে এমনটি তো সবসময় সম্ভব নয়। কিছু জিনিস হৃদয় দিয়ে তৈরি করতে হয়। এ ছবিও তাই। স্রেফ হৃদয়মথিত ভালবাসা দিয়ে তৈরি"।

কথার একেবারে শেষে দৃঢ় স্বরে তাঁর বক্তব্য, " যদি হৃদয় ছুঁয়ে যায় এমন গল্প নিয়ে কোনও পরিচালক ছবি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আসেন এবং তাঁর কাজ যদি আমার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই তাঁর পাশে আমি দাঁড়াব!"