২০০৮ সালে আসমুদ্রহিমাচল ভারত কাঁপিয়ে মুক্তি পেয়েছিল ‘গজিনি’। নামভূমিকায় আমির খানের দুরন্ত অভিনয় এবং অ্যাকশন দেখে তাকে লেগে গিয়েছিল দর্শকের। তবে সবথেকে আলোচিত হয়েছিল এই ছবির জন্য আমিরের অসম্ভব পেশীবহুল চেহারা। কেরিয়ারে সেই প্রথম ওরকম পেশীবহুল চেহারা তৈরি করেছিলেন আমির। তারপর ‘গজিনি’ সেজে পর্দায় আসতেই বক্স অফিসে তৈরি হল ইতিহাস। তবে জানেন কি, আমির নয়, সব ঠিকঠাক থাকলে ‘গজিনি’ হিসেবে দর্শকের সামনে আসতেন সলমন খান! আজ্ঞে হ্যাঁ। ঠিক এরকম দাবি-ই করলেন প্রযোজক বনি কাপুর।
দু’দশকেরও বেশি পুরনো বন্ধুত্ব, একের পর এক হিট ছবি, আর সেই সূত্রে জুড়ে থাকা আস্থা সব মিলিয়েই সলমন খান ও বনির কাপুরের সম্পর্ক বলিউডে বেশ পরিচিত। ‘সির্ফ তুম’ (১৯৯৯) দিয়ে শুরু, তারপর ‘নো এন্ট্রি’ (২০০৫) আর ‘ওয়ান্টেড’ (২০০৯) দু’জনের জুটি একাধিকবার বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে। কিন্তু এই সাফল্যের মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে এক আফসোসের কাহিনি, যা এখনও ভোলেননি বনি কাপুর। আর সেটাই তিনি জানালেন এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে।
বনি জানান, ‘গজিনি’র হিন্দি রিমেক তিনি বানাতে চেয়েছিলেন সলমন খানকে নিয়ে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, চরিত্রটার যে তীব্রতা, আবেগ ও শারীরিক ভাষা প্রয়োজন সলমন তাতে দারুণ ফিট করবেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি টেনে আনেন ‘তেরে নাম’-এর কথা। বলেন, ছবির প্রথমার্ধে লম্বা চুলের রোমান্টিক সলমনকে যেমন মনে থাকে দর্শকের, ঠিক তেমনই পরের অংশে মাথা মুড়িয়ে মানসিক দ্বন্দ্বে জর্জর এক অন্য সলমনও দর্শককে নাড়া দিয়েছিল। বনির যুক্তি, এই দুই রূপের মধ্যেই সেই ‘গজিনি’ চরিত্রকে পাওয়া যেত।
কিন্তু বাস্তবের কাহিনি হল, পরিকল্পনা থাকলেও সব সময় তা গন্তব্যে পৌঁছায় না। বনি জানান, দক্ষিণ ভারতীয় প্রযোজকদের কাছ থেকে রিমেকের স্বত্ব আদায় করতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। একদিকে চুক্তির জট, অন্যদিকে একাধিক পক্ষের দাবি, সব মিলিয়ে ব্যাপারটা আটকে যায়। এদিকে ‘গজিনি’-র গল্প পৌঁছে যায় আমির খানের কাছে, শুরু হয় তাঁর ভাবনা-চিন্তা, তারপর সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যায় বনির। শেষ পর্যন্ত ছবিটি প্রযোজনা করেন আল্লু অরভিন্দ-মধু মন্তেনা, আর কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকেন আমির। এককথায় সলমনকে নিয়ে এই ছবি তৈরির সেই সুযোগটা আর ফেরত পাওয়া হয়নি বনির। আর সেই আফসোস আজও যায়নি তাঁর। আজও তাই একটা দীর্ঘশ্বাস রয়ে গেছে বনির কণ্ঠে, “আমি সত্যিই চেয়েছিলাম সলমনকে নিয়ে গজিনি বানাতে। আজও আফসোসটা রয়ে গিয়েছে।”
তবে শুধু আফসোসের গল্প নয়, বনির স্মৃতিতে আছে কৃতজ্ঞতার বেশ কিছু অধ্যায়ও। ‘সির্ফ তুম’-এর সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ছবিতে বিশেষ উপস্থিতির জন্য ডাকলে এক মুহূর্ত দেরি না করে রাজি হয়েছিলেন সলমন। শুটিং করেছিলেন দু’দিন, কিন্তু বিনিময়ে নেননি কোনও পারিশ্রমিক, এমনকি কোনও উপহারও না। বনির কথায়, “ওটা ছিল সলমনের নিখাদ সদিচ্ছা আর ভালবাসার প্রকাশ।”
‘নো এন্ট্রি’ ছবিকে নিজের কেরিয়ার রিভাইভাল ছবি বলে মানেন বনি কাপুর। তাঁর মতে, অনেকেই বলেন ‘ওয়ান্টেড’ নাকি সলমনের কামব্যাক,কিন্তু বাস্তবে এই ছবিটাই তাঁকে প্রযোজক হিসেবে নতুন করে দৌড়ে ফেরত এনেছিল, দাবি বনির। সবশেষে বলা যায়, বলিউডের এই গল্পটা শুধুই ব্যবসা বা সাফল্যের নয়। এটা বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা আর না-পারা স্বপ্নেরও গল্প। আর সেই গল্পের মাঝেই আজও গুঞ্জন, যদি সত্যিই ‘গজিনি’-তে সালমান থাকতেন, তাহলে কি সিনেমার ইতিহাস একটু অন্যভাবে লেখা হতো?
