চলতি বছরের মে মাসে ভক্তদের চমকে দিয়ে আমির খান ঘোষণা করেছিলেন— পরিচালক রাজকুমার হিরানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি তৈরি করবেন এক বায়োপিক।  ভারতীয় সিনেমার জনক দাদাসাহেব ফালকের জীবনী নিয়ে। কিন্তু  শোনা যাচ্ছে, ছবির ভবিষ্যৎ নাকি আপাতত প্রশ্নের মুখে।

বলিপাড়ায় ফিসফাস, ছবির  চিত্রনাট্যে সন্তুষ্ট নন আমির। তাই তিনি হিরানি ও অভিজাত জোশিকে (যিনি তাঁর চেনা সহলেখক) নতুন করে লিখতে বলেছেন চিত্রনাট্য। সূত্রের খবর, হিরানি ও অভিজাত যোশির কাছ থেকে এই বায়োপিকের চিত্রনাট্য শুনেছিলেন আমির। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছে, ছবিটা বড়পর্দার জন্য যথেষ্ট ‘এন্টারটেইনিং’ নয়। আমির চেয়েছিলেন হাসি, আবেগ আর নাটক—যা হিরানি-অভিজাত জুটির ছবির প্রধান উপজীব্য। কিন্তু এখানে কমেডির অভাবেই তিনি ধন্দে পড়েন। তাই তিনি চিত্রনাট্য ফের ঘষামাজার অনুরোধ করেন।”

সূত্র আরও জানিয়েছে, আমিরের এই প্রতিক্রিয়ায় নাকি হতবাক হয়ে গেছেন হিরানি ও অভিজাত। অক্টোবর ২০২৫-এ শুটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন সব কাজ থমকে আছে। ইতিমধ্যেই অন্য চিত্রনাট্যের খোঁজও শুরু করেছেন আমির খান।

ভারতীয় সিনেমার জনক দাদাসাহেব ফালকের আসল নাম ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকে। ১৯১৩ সালে তাঁর পরিচালিত রাজা হরিশচন্দ্র ভারতের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। এরপর ‘লঙ্কা দহন’, ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্ম’, ‘কালীয় মর্দন’—একের পর এক মাইলফলক তৈরি করেন তিনি। ভারত সরকার তাঁর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৬৯ সালে চালু করে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার—যা আজও দেশের চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ সম্মান। 

এই বায়োপিক হওয়ার কথা ছিল আমির-হিরানি জুটির তৃতীয় ছবি— ‘থ্রি ইডিয়টস’ আর ‘পিকে’-এর দুর্দান্ত সাফল্যের পর। এই ছবির জন্য ইতিমধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলসের ভিএফএক্স স্টুডিও প্রাচীন যুগের ‘এআই রিক্রিয়েশন’ বানানো শুরু করে দিয়েছে। আমিরের টিমের এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে  জানিয়েছে, লেখক হিন্দুকুশ ও অভিষ্কার ভরদ্বাজ টানা চার বছর ধরে এই চিত্রনাট্য ঘষেমেজে তৈরি করেছেন। এমনকী দাদাসাহেব ফালকের নাতিও এই ছবির পাশে দাঁড়িয়ে বহু অমূল্য স্মৃতি শেয়ার করেছেন।

কিন্তু আপাতত সবই থমকে। দর্শক মহলে তাই প্রশ্ন—আমির-হিরানির তৃতীয় ম্যাজিক কি আদৌ জন্ম নেবে, না কি বায়োপিক হারিয়ে যাবে অন্ধকারে?

অন্যদিকে, এক সাক্ষাৎকারে আমির খোলাখুলি জানিয়েছেন যে তিনি নিজের ছবির সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে কোনও দিনই মিথ্যে বলেন না। যদিও স্বীকার করলেন, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই ভুয়ো কর্পোরেট বুকিং কিংবা ফাঁপা প্রচারণার মাধ্যমে সাফল্যের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করতে দ্বিধা করেন না!

সম্প্রতি, দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির বলেন,“আমার ছবির ব্যবসার যে অঙ্কটা আসে, ঠিক সেটাই প্রকাশ্যে দিই। নিজের টিমকে সোজাসাপটা  নির্দেশ দিয়ে দিই যেন কোনও ভুল বা মিথ্যে সংখ্যা বাইরে না যায়। ব্যবসায় মিথ্যে বলে কোনও লাভ নেই।”


কর্পোরেট বুকিংয়ের ভাঁওতা নিয়ে সোজাসুজি আলোচনা করেন ‘মিঃ পারফেকশনিস্ট’। সেই সাক্ষাৎকারে যখন প্রশ্নকর্তা ইঙ্গিত দেন যে ইন্ডাস্ট্রির ৯০ শতাংশ প্রযোজক-পরিবেশক কর্পোরেট বুকিং করেন, তখনও কাউকে সরাসরি আক্রমণ করতে চাননি আমির। তবে যুক্তি খাড়া করলেন, “প্রত্যেকের নিজস্ব বাধ্যবাধকতা আছে। মানুষ ভাবে—আমি ছবি বানিয়েছি, ব্যবসা আমার, কেন বলব এটা চলেনি? যদি সবাই ভাবে ছবি হিট হয়েছে, তবে আরও বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু এটা খুবই স্বল্পস্থায়ী। জনতাকে এক-দু’বার বোকা বানানো যায়, ইন্ডাস্ট্রিকে নয়। শেষমেশ সবাই আসল সত্যিটা জেনেই যায়।”