ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এমন কিছু তারকা আছেন, যাঁদের অফস্ক্রিন জীবন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। সেই তালিকায় অন্যতম নাম ধর্মেন্দ্র। পর্দায় যেমন তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় এবং নায়কোচিত, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর গল্প ভরা প্রেম, জটিলতা এবং আবেগে।

পাঞ্জাবের এক সাধারণ যুবক ধর্মেন্দ্র মুম্বইয়ে এসেছিলেন অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে। তখন তিনি বিবাহিত। খুব দ্রুতই সাফল্য তাঁর জীবনে আসে, যা শুধু তাঁর নয়, পুরো পরিবারের ভাগ্য বদলে দেয়। প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌরকে মানিয়ে নিতে হয় এক নতুন জগতের সঙ্গে। যেখানে শুধুই গ্ল্যামার, আলো আর ব্যস্ততা।

তবে শিগগিরই তাঁদের দাম্পত্য জীবনে আসে আবেগের ঝড়। ১৯৭০ সালে ‘তুম হসিন মেঁ জওয়ান’ ছবির শুটিংয়ের সময় অভিনেত্রী হেমা মালিনীর সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর প্রেম শুরু হয়। সমাজ এবং পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ১৯৮০ সালে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

দ্বিতীয় বিয়ে ধর্মেন্দ্রর জীবনে স্বাভাবিকভাবেই বিভাজন তৈরি করে। হেমা মালিনী নিজের বাংলোতে আলাদা থাকেনয আর ধর্মেন্দ্র প্রকাশ কৌর এবং তাঁদের চার সন্তান সানি, ববি, অজিতা এবং বিজেতার সঙ্গে জীবনযাপন করেন।

এই দুই পরিবারের মধ্যে কখনও কাছাকাছি না এলেও, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়ার সম্পর্ক বজায় রয়েছে আজও। এষা দিওল এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি প্রকাশ কৌরকে প্রথম দেখেন ৩০ বছর বয়সে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ববি দেওল জানান, বর্তমানে তাঁর বাবা-মা একসঙ্গে খন্ডালার ফার্মহাউসে থাকেন। ববি বলেন, “মা-বাবা এখন খন্ডালায় আছেন। অনেকেই ভাবেন বাবা একা থাকেন, কিন্তু তা নয়। তাঁরা একসঙ্গে আছেন, শুধু বাবা একটু নাটকীয় স্বভাবের। ওঁরা দু’জনেই এখন বয়সে প্রবীণ, তাই ফার্মহাউসে থাকাটা তাঁদের কাছে স্বস্তির।”

ববি আরও বলেন, “বাবা খুব আবেগপ্রবণ মানুষ। যা অনুভব করেন, তা লুকোন না। কখনও আমি জিজ্ঞেস করি, কেন এমন কিছু লিখলেন বা বললেন, উনি বলেন—‘মন থেকে বলেছি।’”

মায়ের প্রসঙ্গে ববি বলেন, “মা খুব শক্ত মনের মানুষ। ছোট গ্রাম থেকে উঠে এসে একজন সুপারস্টারের স্ত্রী হিসেবে জীবন মানিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু উনি সবসময় বাবার পাশে থেকেছেন। আমরা যেমন মানুষ, তেমন হওয়ার পিছনে মায়ের ভূমিকা বিশাল।”

ধর্মেন্দ্র এবং প্রকাশ ১৯৫৪ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন অভিনেতার বয়স ছিল মাত্র ১৯। সাত দশকের বেশি সময় পার করেও তাঁদের বন্ধন আজও অটুট। এই বছর ববি দিওল তাঁদের ৭১তম বিবাহবার্ষিকীতে একটি বিরল ছবি শেয়ার করেছিলেন—যেখানে ফুটে উঠেছিল এক জীবন্ত ভালবাসার গল্প।

অন্য দিকে, হেমা মালিনী সবসময়ই মর্যাদার সঙ্গে নিজের আলাদা জীবন যাপনের কথা বলেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটা পরিকল্পিত কিছু ছিল না, এমনই হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেক নারীই চায় নিজের স্বামী, সন্তান, পরিবার নিয়ে থাকতে। কিন্তু কখনও কখনও জীবনের পথ অন্যদিকে চলে যায়। আমি দুঃখিত নই। আমার দু’টি মেয়ে আছে, আমি ওদের ভালভাবে মানুষ করেছি, এটাই আমার সুখ।”