আজকাল ওয়েবডেস্ক: যখন আপনি কাজের সময় থেকে চোখ সরিয়ে বোর্ডিং পাস, লাগেজের চাকা আর ছুটির পরিকল্পনায় মন দিচ্ছেন, তখন সেই ভ্রমণ কীভাবে সঠিকভাবে করবেন, তা ভেবে দেখাও জরুরি।
বছর শেষের ছুটিতে যাওয়ার জন্য হঠাৎ করে একটি ইনস্ট্যান্ট পার্সোনাল লোন নেওয়া সুবিধাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয়তা কতটা বাস্তব, তা ঠান্ডা মাথায় মূল্যায়ন করা উচিত। কখনও কখনও তাড়াহুড়োর উত্তেজনা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বাস্তবতাকে আড়াল করে দেয়।
ভারতে গত কয়েক বছরে রিটেল পার্সোনাল লোনের বাজার দ্রুত বেড়েছে, তবে এর সঙ্গে বেড়েছে অযাচিত ঋণগ্রহণ ও পরবর্তী পরিশোধ-চাপের উদ্বেগও। উদাহরণ হিসেবে, পার্সোনাল লোনের মোট স্থূল অনুৎপাদনশীল সম্পদ অনুপাত ২০২৪ সালের মার্চে ১.০৩% থেকে ২০২৫ সালের মার্চে বেড়ে হয়েছে ১.১৮%। তাই ছুটির খরচ মেটাতে ঋণ নেওয়ার আগে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিজেকেই করা জরুরি—যাতে ফিরতি পথে স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আসা যায়, আর দুঃশ্চিন্তা নয়।
অনেকে কেবল মাসিক কিস্তিতেই মনোযোগ দেন এবং ভাবেন মাসে কেমন চাপ পড়বে। কিন্তু আসল বিষয় হল সুদের হার ও ঋণের মেয়াদ–যেগুলোই নির্ধারণ করে মোট কত টাকা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। ভারতের বিভিন্ন ঋণদাতা প্রায় ৯.৯৯% বার্ষিক সুদ থেকে পার্সোনাল লোন দেয়, তবে আপনার ক্রেডিট স্কোর ও প্রোফাইল অনুযায়ী কার্যকর হার আরও বেশি হতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হবে প্রসেসিং ফি এবং আগাম পরিশোধের সম্ভাব্য জরিমানা। সব মিলিয়ে, ট্রিপ শেষে আপনার পকেট থেকে মোট কত যাবে—তার পূর্ণ হিসাব আগে করা খুবই জরুরি।
ঋণ মানে শুধু আজকের ভ্রমণ নয়, আগামী কয়েক মাস বা বছরের আর্থিক বাধ্যবাধকতাও। নিয়ম অনুযায়ী, আপনার মোট EMI যেন নেট আয়ের ৩০–৪০% না ছাড়ায়; তা না হলে আয়ের সামান্য পরিবর্তন বা অপ্রত্যাশিত খরচই পরিশোধকে কঠিন করে তুলতে পারে। আরবিআই জানাচ্ছে, "other personal loans"–এর বৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হয়েছে—যা দেখায় মানুষ এখন আরও বেছে ঋণ নিচ্ছে। তাই ভেবে দেখুন—আপনার মাসিক বাজেট, জরুরি তহবিল ও অন্য সঞ্চয় লক্ষ্যের সঙ্গে এই EMI মানানসই হবে কি না।
ভ্রমণ আনন্দের, কিন্তু ঋণ মানে ভবিষ্যতের আয় আজ খরচ করা। শিক্ষালাভ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের ঋণ যেখানে ভবিষ্যতে কোনও মূল্য তৈরি করে, ছুটি কাটানোর ঋণ সেখানে পুরোপুরি ভোগ্য ব্যয়। এটি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে মাথায় রেখেই ভাবতে হবে। অনেক রিপোর্ট বলছে, অনিরাপদ রিটেল লোনে চাপ বাড়ছে, যদিও তা এখনো সিস্টেমিক ঝুঁকি নয়। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—আপনি কি সঞ্চয় করলে তবুও এই ভ্রমণ করতেন? যদি শুধু সময়ের তফাত, তবে লোন নেওয়া যায়; কিন্তু যদি শুধুই বিলাসিতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণে ঢুকতে হয়, তবে ভাবা উচিত।
জীবন অনিশ্চিত—চাকরি বদল, অসুস্থতা বা হঠাৎ বড় খরচ যে কোনও সময় আসতে পারে। তখনও EMI আপনাকে দিতেই হবে। তাই আপনার বাজেট একটু নড়বড়ে হলে বিপদ বাড়বে। আয়ের সম্ভাব্য ওঠানামা ভেবে একটি বাফার রাখাই শ্রেয়। প্রয়োজনে কম মেয়াদ বেছে নিলে সুদের বোঝা কমবে।
ঋণ ছাড়াও বিকল্প আছে—সঞ্চিত টাকায় ভ্রমণ করা, বাজেট কমানো, অফার খোঁজা বা গন্তব্য পরিবর্তন করা। ভারতের পার্সোনাল লোন বাজার আরও প্রসারিত হতে চলেছে, কিন্তু ঋণ যেন আপনার সিদ্ধান্ত নয়, বরং আপনার পরিকল্পনার অংশ হয়—এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
এই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট হলে এবং পরিকল্পনা পরিষ্কার থাকলে ঋণ একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। আর সন্দেহ থাকলে, ভ্রমণ কিছুটা ফেলে রাখা বা ছোট করা নিরাপদ পন্থা। বছরের শেষের ছুটি আনন্দময় হওয়া উচিত, আর্থিক বোঝা নয়।
