আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট আজ এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যায় জানিয়েছে যে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে আদালত কোনও সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে না। পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চের মতে, সংবিধানের ২০০ ও ২০১ অনুচ্ছেদ এমনভাবে রচিত যে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয়তা রাখা হয়েছে। আদালত যদি সময়সীমা নির্ধারণ করে, তবে সেই সাংবিধানিক নমনীয়তা নষ্ট হবে এবং তা সংবিধানের কাঠামোর পরিপন্থী হবে। বেঞ্চ আরও জানিয়েছে যে রাষ্ট্রপতি বা গভর্নরের সিদ্ধান্ত সাধারণত ‘justiciable’ নয়, অর্থাৎ সেই সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। কেবলমাত্র কোনও বিল আইন রূপে কার্যকর হলে তার সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করা সম্ভব।
এই ব্যাখ্যার পটভূমি তামিলনাড়ু রাজ্যপাল সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রায়। তামিলনাড়ু সরকার অভিযোগ করেছিল যে গভর্নর আর. এন. রবি ইচ্ছাকৃতভাবে ১০টি বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রেখেছেন। সেই পরিস্থিতিতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ অভূতপূর্বভাবে সিদ্ধান্ত দেয় যে অতিরিক্ত বিলম্বের কারণে ওই বিলগুলিকে “deemed assent” বা স্বয়ংক্রিয় অনুমোদন বলে গণ্য করা হবে। এই রায়কে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিষয়টি নিয়ে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। তিনি জানতে চান, সংবিধানে সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকলে আদালত কি রাষ্ট্রপতি ও গভর্নরের ওপর সময়সীমা আরোপ করতে পারে, এবং তাঁদের সিদ্ধান্ত কি আদালতে বিচারযোগ্য।
রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রশ্নে সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলেন যে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল তাঁদের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য আদালতে দায়ী নন। আদালত আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে পূর্ববর্তী রায়ে যে ‘deemed assent’-এর কথা বলা হয়েছিল, তা সংবিধানসম্মত নয়। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের কাজ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না এবং সেই ধরনের ঘোষণা সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে।
তবে আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাও যোগ করেছে। তারা বলেছে, রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বা তার কারণ আদালত পরীক্ষা করতে পারবে না, কিন্তু যদি কোনও বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিনা যুক্তিতে আটকে রাখা হয় এবং সেই নিষ্ক্রিয়তা দীর্ঘ ও অযৌক্তিক হয়, তাহলে আদালত সীমিত পরিসরে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অর্থাৎ গভর্নর বা রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপের merits বিচার্য নয়, কিন্তু দীর্ঘকালীন নিষ্ক্রিয়তা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল হলে বিচার বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।
বেঞ্চ মন্তব্য করে যে সংবিধানের প্রতিটি অঙ্গ—বিচার বিভাগ, নির্বাহী ও আইনসভার ভূমিকা আলাদা হলেও তারা পরস্পর-নির্ভরশীল। কেউ এককভাবে কাজ করতে পারে না। এই রায় সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত সরকারের ভূমিকা ও সাংবিধানিক প্রধানদের আচরণের মধ্যে সম্পর্ককে নতুনভাবে স্পষ্ট করল। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগের ক্ষমতার সীমা নিয়েও একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিল।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গভর্নর ও নির্বাচিত সরকারগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। আজকের রায় সেই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি একদিকে গভর্নর ও রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিল, অন্যদিকে নির্বাহী নিষ্ক্রিয়তার আড়ালে সংবিধান অবমাননার সম্ভাবনা থাকলে বিচার বিভাগ যে নীরব থাকবে না, সেটিও স্পষ্ট করে দিল।
