আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোনার দাম ভারতসহ বিশ্বজুড়ে নতুন সর্বকালের উচ্চতায় পৌঁছল। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বাজারের প্রভাবে বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শুক্রবার ভারতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম দাঁড়ায় প্রায় ১.১১ লক্ষ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। আন্তর্জাতিক বাজারেও সোনার দাম সর্বোচ্চ পর্যায় ছুঁয়ে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিশ্ববাজারে স্পট গোল্ড ০.৬% বেড়ে প্রতি আউন্স ৩,৬৫৪.৩৭ ডলারে পৌঁছায়, যা সপ্তাহের শুরুতে হওয়া রেকর্ড ৩,৬৭৩.৯৫ ডলারের কাছাকাছি। একইসঙ্গে ডিসেম্বরে ডেলিভারির জন্য মার্কিন গোল্ড ফিউচার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৬৯২.৮০ ডলার প্রতি আউন্সে। কিন্তু প্রশ্ন হল সোনার এই তীব্র উত্থানের পেছনে কী কী কারণ রয়েছে? তিনটি প্রধান কারণ দেখে নিন যা সোনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে
আরও পড়ুন: বিশ্বের কোন দেশে সবথেকে বেশি ইঞ্জিনিয়ার, ভারত কি শীর্ষে?
মার্কিন শ্রমবাজারের দুর্বলতা
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, মার্কিন শ্রমবাজারে ধীরগতি চলছে। বেকারত্বের হার বাড়ছে, চাকরি তৈরির হার কমছে। এই দুর্বল সংকেতগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগকে অনেকাংশে ছাপিয়ে গেছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ২০২৫ জুড়ে ফেডারেল রিজার্ভ একাধিকবার সুদের হার কমাতে পারে। সুদের হার কমার সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে।
নিরাপদ আশ্রয়ের চাহিদা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনও প্রশমিত হয়নি। যুদ্ধ, সংঘাত ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি নিরাপদ সম্পদের দিকে টেনে নিচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে সোনা এমন এক সম্পদ যা অনিশ্চিত সময়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই নিরাপদ আশ্রয়ের মানসিকতা সোনার চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রয় ও দুর্বল ডলারের প্রভাব
বিশ্বের নানা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সোনার অংশ ক্রমশ বাড়াচ্ছে। এই বাড়তি ক্রয় সোনার বাজারে স্থায়ী সমর্থন জোগাচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন ডলার কিছুটা দুর্বল হয়েছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে পড়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের কাছে এর আকর্ষণ বাড়ছে এবং দাম আরও উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে।
সোনার দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা
চলতি বছরেই সোনার দাম প্রায় ৩৯% বেড়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে সোনার দামের ধারা আরও ইতিবাচক। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩,৯০০ ডলারের কাছাকাছি গেলে কিছুটা বাধার মুখে পড়তে পারে।
ভারতের ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের প্রভাব
ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য এই উত্থান মানে হল গয়না ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ আরও বেড়ে যাওয়া। তবে বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে এটি স্পষ্ট সংকেত দেয় যে অনিশ্চিত অর্থনৈতিক সময়ে সোনা এখনও কার্যকর একটি সুরক্ষাবলয় বা হেজ হিসেবে রয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে, বিশ্বের অস্থিরতা, মার্কিন অর্থনীতির ধীরগতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের ক্রমবর্ধমান ক্রয় এই তিনটি মূল কারণে সোনার দাম ইতিহাস সৃষ্টি করছে। আগামী দিনে দাম কোথায় গিয়ে থামবে তা বলা কঠিন হলেও, আপাতত সোনার ঝলক বিনিয়োগকারীদের নজর কেড়েই চলেছে।

