আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রাথমিক মামলায় স্বস্তি পেল রাজ্য। এতদিন ধরে এবিষয়ে যে বিতর্ক গোটা রাজ্যে চলছিল তার অবসান হল। বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানেই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির রায় বাতিল করে দেওয়া হয়। রায়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় ৩২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাজ থাকছে। তাদের চাকরি বাতিল করা হবে না। স্বপদে বহাল রইলেন প্রত্যেকে। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলির সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ করে জানাল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, “দীর্ঘ ৯ বছর পর চাকরি বাতিল করলে পরিবারগুলির উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।” আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী দুর্নীতির জন্য ৩২ হাজার প্রাথমিক চাকরি বাতিল করা হয়। কর্তৃপক্ষের ভুল কিংবা দুর্নীতির জন্য নিরীহ চাকুরিরতদের চাকরি বাতিল হতে পারে না। যাঁরা সফল হননি, তাঁদের জন্য সব কিছু ড্যামেজ হতে পারে না। এতদিন ধরে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁরা কোনও প্রভাবশালীদের সঙ্গে যুক্ত নন। তাই তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে বলেই জানায় ডিভিশন বেঞ্চ। হাই কোর্টের নির্দেশে স্বস্তিতে ২০১৪ সালের টেটের মাধ্যমে নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকরা।
২০২৩ সালের ১২ মে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি। তার আগে শুনানি চলাকালীন আদালত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্যানেলের নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা তলব করেছিল। পর্ষদ তৎকালীন বিচারপতি গাঙ্গুলির এজলাসে তালিকা জমা দিয়ে জানায়, প্যানেলের চাকরি প্রাপকদের সর্বনিম্ন নম্বর ১৪.১৯১। পর্ষদের এই বক্তব্যে ভুল রয়েছে বলে দাবি করেন মামলাকারীরা। তাঁদের চেয়ে ১৩ নম্বর কম পেয়েও চাকরি পেয়েছেন ৮২৪ জন চাকরিপ্রার্থী। ওই ৮২৪ জনের নাম প্যানেলে রয়েছে।
তার প্রেক্ষিতে আদালত পর্ষদের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠায়। কিন্তু তা দিতে পারেনি তারা। শুধু তা-ই নয়, শুনানি চলাকালীন মামলাকারীরা তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতির (ওবিসি) প্রার্থীদের প্যানেল প্রকাশের দাবিও জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, প্যানেল প্রকাশ করলেই স্পষ্ট হবে ওই প্রার্থীদের সর্বনিম্ন নম্বর কত। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও পর্ষদ নীরব থেকেছে। সেই তথ্য আদালতে জমা করতে পারেনি।
‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থী প্রিয়াঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন হাই কোর্টে ২০১৪ সালের প্রাথমিকে নিয়োগপরীক্ষায় (টেট) দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা চাকরি পাননি।
মামলাকারীরা যে নিয়মের কথা বলেছিলেন সেটা অনুযায়ী, এনসিটিই-এর (জাতীয় শিক্ষক শিক্ষণ পর্ষদ) নিয়ম মেনে শিক্ষক হওয়ার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মামলাকারীদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে প্যানেল তৈরি করা হয়েছে, তাতে একাধিক অনিয়ম রয়েছে। নিয়মে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হলেও দেখা গিয়েছে, ওই প্যানেলের বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী প্রশিক্ষণহীন। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
