তীর্থঙ্কর দাস: নদীয়ার বাসিন্দা, শানিয়া হোসেন ( নাম পরিবর্তিত)। বর্তমানে নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন একবার নয় দু' বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় তার। নদীয়াতেই ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে ১৩ বছর বয়সী মেয়ের বিয়ে ঠিক করে তার নিজের পরিবার। নিয়ম মেনে বিয়ে হয়। ১৩ বছর বয়সে বিয়ের পরই সংসারে শুরু হয় অশান্তি এবং প্রতিনিয়ত চলত তার উপর অত্যাচার। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসে শানিয়া। 

কিছুদিনের মধ্যে ২০২২ সালে আবারও তার দ্বিতীয়বার বিয়ে দেওয়া হয়। মাঝবয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আবারও বাড়ি চলে আসে নাবালিকা। তারপরই ঘটে আরও বড় বিপদ। তার জীবনে সেই সময় যা ঘটে, তা সে হয়তো ঘুণাক্ষরেও বুঝে উঠতে পারেনি। নিজেরই মা মুম্বই শহরে নিয়ে চলে যায় তাকে। মায়ের কথা শুনে মেয়ে পাড়ি দেয় মুম্বাইয়ে এবং মা-ঠাকুমা মিলে দেহ ব্যাবসায় নামিয়ে দেয় এই নাবালিকাকে। কিছু বুঝতে না পেরে পরিবারের কথা শুনে সে নিজের অনিচ্ছাতেও দেহ ব্যবসায় বাধ্য হয়। 

কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'জাবালা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেশন', যারা মূলত বাল্যবিবাহ, পাচার হয়ে যাওয়ার মতো সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের আধিকারিকদের কাছে খবর গিয়ে পৌঁছয়। বাংলার "জাবালা এক্সারসাইজ রিসার্চ অর্গানাইজেশনের" পক্ষ থেকে পুলিশের সহায়তা নিয়ে মুম্বই থেকে উদ্ধার করা হয় এই নাবালিকাকে। 

পরবর্তীতে নাবালিকা তার মায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'জাবালা এক্সারসাইজ রিসার্চ অর্গানাইজেশনের' সদস্যদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন এবং এই সংস্থার তরফে আইননানুগ ব্যাবস্থা নেয় তার মা এবং ঠাকুমার বিরুদ্ধে । কিছুদিন পর পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে ২০২৩ সালে তাকে নিজের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় আবারও। কিন্তু সেবারও ১৪ বছর বয়সী নাবালিকাকে নিজের বাড়িতেই শিকার হতে হয় শারীরিক নির্যাতনের। বর্তমানে হোমে রয়েছে এবং নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

সংস্থার সদস্য কাকলি ঘোষ আজকাল ডট ইনকে জানিয়েছেন, 'আগামী বছর মেয়েটি মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে এবং আমরা প্রতিটা মুহূর্তে ওর পাশে আছি এবং যা প্রয়োজন সবকিছু সহযোগিতা আমরা করব। 'জাবালা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেসানের সদর দপ্তর বালিগঞ্জে। বাল্যবিবাহ এবং পাচারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বর্ডার অঞ্চলে। দক্ষিণ এবং উত্তর ২৪ পরগনা, ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদের মতো একাধিক বর্ডার অঞ্চলে উদ্ধারকার্য চালায় এই সংস্থা।