মিল্টন সেন, হুগলি: গৃহস্থালির গ্যাস ব্যবহার করে চলছিল ঠিকাদারের ঝালাইয়ের কাজ। জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ বন্ধ করলেন পুরপ্রধান। ঠিকাদার ফেরিঘাট নির্মাণের কাজ করছিল। ঝালাইয়ের সেই কাজ চলছিল রান্নার গ্যাস ব্যবহার করে, বাণিজ্যিক নয়। কোন্নগর ফেরিঘাটে নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নার গ্যাস। তড়িঘড়ি বন্ধ করা হল কাজ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কোন্নগর ফেরিঘাটে বেশ কিছু দিন ধরেই নির্মাণের কাজ চলছিল। কাজ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। পুরপ্রধানের কাছে অভিযোগ আসে যারা ফেরিঘাট নির্মাণের কাজ করছেন, তাঁরা সেখানে ঝালাইয়ের কাজ করার জন্য ব্যবহার করছেন গৃহস্থালির রান্না গ্যাস সিলিন্ডার। যা কার্যত বেআইনি।
এই প্রসঙ্গে কোন্নগর পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন দাস জানান, সংবাদমাধ্যমের থেকেই তিনি এই খবরটি জানতে পারেন। জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন মন্ত্রী এবং পরিবহন সচিবকে গোটা বিষয়টি তিনি জানান। তৎক্ষণাৎ রাজ্য পরিবহন দপ্তর থেকে তাঁর কাছে নির্দেশ আসে এই ধরনের কাজ যেখানে চলছে সেই কাজগুলিকে অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। তারপরেই প্রশাসনের তরফে বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয় অবিলম্বে গৃহস্থালির সিলিন্ডার দিয়ে কাজ বন্ধ করতে হবে। তার পরিবর্তে বানিজ্যিক গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ‘আমাদের আর মেরো না, সহ্য করতে পারছি না’, বেকায়দায় পড়ে ফোনে বলেছিলেন পাক ডিজিএমও, সংসদে জানালেন মোদি
শুধু ঝালাইয়ের কাজেই নয়। আরও অনেক কাজে বাণিজ্যিক গ্যাসের পরিবর্তে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা যায়। অটোতো প্রায়শই রান্নার গ্যাসে চলে। কিন্তু রান্নার গ্যাসে অটো চালালে বায়ু দূষণ হয় প্রবল। অটোর গ্যাস এবং রান্নার গ্যাস দু’টোই এলপিজি হলেও উপাদানে পার্থক্য অনেক। এলপিজি-র দুই উপাদান বুটেন ও প্রপেন অটোর ক্ষেত্রে ৫০:৫০ অনুপাতে থাকে। কিন্তু কুকিং এলপিজি বা রান্নার গ্যাসে বুটেন ও প্রপেনের অনুপাত ৭০:৩০। রান্নার গ্যাসে ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বনও থাকে। কিন্তু রান্নার গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে বা খোলা অবস্থায় পুড়ে যায় বলে ওই হাইড্রোকার্বন বাতাসে মিশে যেতে পারে না। কিন্তু হাইড্রোকার্বন যুক্ত রান্নার গ্যাসে অটো চললে তা ইঞ্জিনের মধ্যেই পোড়ে এবং হাইড্রোকার্বন জমা হয় গাড়ির ইঞ্জিনে। ফলে বাতাসে তৈরি হয় কার্বন মনোক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস।
কিলোগ্রাম-প্রতি কাটা গ্যাসের দাম পড়ে ৬০ টাকা পর্যন্ত। অন্য দিকে, বাজারে অটো এলপিজি-র লিটার প্রতি দাম প্রায় ৫০ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি প্রায় ৯০ টাকা। চোরাই রান্নার গ্যাসে বেআইনি ভাবে অটো চালিয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা সাশ্রয় করছেন অটো মালিক বা চালকেরা। কিন্তু বাড়ছে ঝুঁকি ও দূষণ এবং কমছে সেই সব অটোগুলির আয়ু।
এই বিপজ্জনক কারবারে প্রথম বিপদ হতে পারে সিলিন্ডার থেকে পাম্প করে নল দিয়ে রান্নার গ্যাস অটোর জ্বালানি ট্যাঙ্কে ভরার সময়ে। কারণ, বাতাসের সংস্পর্শে লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) একটি বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরি করে এবং একটি মাত্র স্ফুলিঙ্গ থেকেই বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে।
ছবি পার্থ রাহা।
