আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিক্ষা করছেন ভগবতী গড়াই। ভগবতীদেবী এক অশীতিপর মা। অসুস্থ, অক্ষম একমাত্র ছেলের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতেই তাঁর এই ক্লেশযাপন। অথচ এক বছর আগেও তিনি পরমুখাপেক্ষী ছিলেন না। বাসন মেজে খেতেন। অশক্ত শরীর আর চলে না। তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি। আর ভিখিরি সমাজে তিনি নতুন বলে তাঁদের নিয়মকানুন কিছুই জানেন না। সেজন্যই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের এককোনে বসে থাকতে হচ্ছে তাঁকে‌। চেষ্টা করছেন নিজের সমস্যার কথা বলতে। কিন্তু কারই বা সময় আছে পুজোর সময় অন্যের দুঃখের কাহিনী শোনার! কারণ বেজে গিয়েছে ঢাক। সর্বমঙ্গলা মন্দিরে শুরু হয়েছে শারদোৎসব। মন্দিরে এসে ঘুরে গিয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে রাজনৈতিক নেতারা।

দূরে দাঁড়িয়ে বাকি সকলের মতো ভগবতীদেবী সম্ভ্রমে দেখেছেন সেই দৃশ্য। হয়ত ফিরে গিয়েছেন ফেলে আসা তাঁর সেই অতীতে‌। যেখানে রাজভোগ না জুটলেও জুটতো পেট ভরা ভাত। ভগবতীদেবীর বাড়ি বনকাপাসির কাছে যজ্ঞেশ্বরডিহি গ্রামে। তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় গড়াই ছিলেন একজন ক্ষুদ্র কৃষক। তাঁদের কিছু কিছু জমি জায়গাও ছিল। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় কিছুটা অলস প্রকৃতির ছিলেন বলে তাঁদের সমস্ত জমি একসময় বিক্রি হয়ে যায়। সেইসঙ্গে মৃত্যু হয় তাঁর। ততদিনে ভগবতীদেবী দুই ছেলের মা। সহায় সম্বলহীন অবস্থায় শুরু হয় তাঁর দিনযাপন। এরপর চলে এসেছিলেন বর্ধমানে। সেখানে কিছুদিন ভাড়া বাড়িতে থাকলেও এরপর টাকার অভাবে ঠাঁইহারা হয়ে যান। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বড় ছেলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা করাতে পারেননি। মৃত্যু হয় ছেলের। ছোট ছেলেকে নিয়ে ভগবতীদেবী এরপর থাকতে শুরু করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত সেই ছেলেও হয়ে পড়ে অসুস্থ। হাসপাতালে কিছুদিন ভর্তি থাকলেও এরপর ছাড়া পেয়ে বাড়িতে আসার পর চিকিৎসা আর চালিয়ে যেতে পারছেন না।

আরও পড়ুন: মিলল না হাতে 'হাত', গতবার পুজো শুরু হলেও এবছর বন্ধ হয়ে গেল রাজ্য কংগ্রেসের দুর্গাপুজো, পিছনে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?

উপায়ান্তর না পেয়ে শেষপর্যন্ত সর্বমঙ্গলার মন্দিরে ভিক্ষা শুরু করেন ভগবতীদেবী। ইতিমধ্যেই অশীতিপর এই বৃদ্ধার কাহিনী কেউ কেউ শুনেছেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, এটা খুবই দুঃখজনক। অবশ্যই তাঁর তরফ থেকে সমাধানের বিষয়ে চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বর্ধমান সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দীপঙ্কর দে জানান, আমরা চাই উৎসবের এই মরসুমে কোনো মাকে যেন তাঁর সন্তানের জন্য ভিক্ষা করতে না হয়। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন, বিজেপির তরফে ওঁকে কিছু সাহায্য করা যায় কিনা সে বিষয়টি তিনি দেখবেন। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একটি সংগঠনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করছেন কীভাবে ওই অসহায় মহিলাকে সহায়তা করা যায়। কারণ এটা সমাজের সকলের দায়িত্ব।সর্বমঙ্গলা মন্দিরে সকলেই আসেন নিজের ও প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায়। সকলের মঙ্গল করেন বলেই দেবীর নাম সর্বমঙ্গলা। ভগবতীদেবীও তাকিয়ে রয়েছেন দেবীর করুণা দৃষ্টির জন্য। সন্তানের মঙ্গলের কামনায়।

আরও পড়ুন: ভরদুপুরে রাস্তায় প্রকাশ্যে চুলোচুলি, চড়-থাপ্পড় দুই যুবতীর! দু-ধারে দাঁড়িয়ে পড়ল সবাই, দেখে হাঁ শহরবাসী