মিল্টন সেন, হুগলি: 'ডানা'র প্রভাবে বুধবার সকালে হুগলি জুড়ে হল বৃষ্টি। সকাল থেকে ফেরি পরিষেবা চালু থাকলেও প্রশাসনের নির্দেশে বিকেল পাঁচটা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে ফেরিঘাট। এই মর্মে জেলার প্রত্যেক ফেরিঘাটে চলছে মাইক প্রচার। চলছে গঙ্গা পারে বসবাসকারীদের মাইকিং করে সতর্ক করার কাজ। 

 

ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতায় পুরসভাগুলির সঙ্গে নবান্নর ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছে। তারপরেই বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে জনসাধারণকে সচেতন করার কাজ শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কতায় জেলার পুরসভাগুলির সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। বৈঠক হয়েছে হুগলি জেলার উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া ৯টি পুরসভা এবং একটি পুরনিগমের সঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কী করণীয় তা জানিয়ে দিয়েছেন আধিকারিকরা। আলোচনা হয়েছে পানীয় জল, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে জরুরি পরিষেবা ঠিক রাখার বিষয়ে। 

 

মাইক প্রচার করে হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ঝন্টু বিশ্বাস বাসিন্দাদের উদ্দেশে আগাম নবান্নর সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। কাঁচা বাড়ি, ঝড়ে ক্ষতি হতে পারে এমন বাড়িতে যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কমিউনিটি হলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছয় নম্বর ওয়ার্ডের জেলে পাড়ার বাসিন্দাদের মাছ ধরতে নদীতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আবহাওয়া দপ্তরের তরফে হুগলি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করেছে। মনে করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'র দাপটে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আগে থেকেই তৎপর জেলা প্রশাসন। সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষদের কন্ট্রোল রুম নম্বর ৭০০৩১৯০৫০৭, ০৩৩-২৬৮১২৬৫২ যোগাযোগ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। 

 

এদিন জেলার পুরসভাগুলির তরফে ফেরিঘাট বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এদিন অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর থেকে ২৫ পর্যন্ত ফেরিঘাট বন্ধ থাকবে। ভেসেল বা লঞ্চ চলবে না। তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাত্রীদের। ফেরিঘাটে যাত্রীদের উদ্দেশে মাইকিং করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বৈদ্যবাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পিন্টু মাহাত বলেছেন, গঙ্গার পারে যাঁরা দুর্বল বাড়িতে বসবাস করেন, তাঁদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। তিনটে স্কুল ঠিক করে রাখা হয়েছে। সেখানে বাসিন্দাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ চলছে। 

 

প্রচার করা হচ্ছে বাড়িতে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানীয় জল মজুত করে রাখার বিষয়ে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মোবাইল ফোন সুরক্ষিত স্থানে এবং চার্জ দিয়ে রাখার বিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে যে সমস্ত এলাকায় দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল এখনও পর্যন্ত খোলা হয়নি, সেই প্যান্ডেলগুলি অবিলম্বে খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুরসভার যেই সব এলাকায় জল জমে এমন একাধিক এলাকায় পাম্পের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

 

ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলবে ভারী বৃষ্টি। দুর্যোগের প্রভাবে জেলা জুড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে ইতিমধ্যেই রাজ্য কৃষি দপ্তরের তরফে কৃষকদের উদ্দেশে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে ফসল দ্রুত কেটে নেওয়ার পাশাপাশি কাটা ধান জমিতে ফেলে না রেখে দ্রুত খামারে তুলে নিতে হবে। পেঁপে, কলা, বিভিন্ন সবজি, পানের বরজ এবং ডাল সহ বিভিন্ন শস্যের জমিগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি-না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। 

 

জেলা কৃষি দপ্তরের তরফে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের উদ্দেশে প্রচার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে। খারিফ মরসুমে জেলায় ১ লক্ষ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। বর্তমানে একাধিক জমিতে চাষ করা ধানে পাক ধরলেও, এখনও ধান কেটে গোলায় তোলার সময় হয়নি। আর তা নিয়ে যথেষ্টই চিন্তায় জেলার কৃষক মহল। ঝড়ে কাঁচা সবজিতেও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 

 

ছবি পার্থ রাহা।