আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তমকুমার ব্রজবাসীর পর নিশিকান্ত দাস। একের পর এক বাসিন্দা পাচ্ছেন 'ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল'-এর এনআরসি নোটিশ। তাতে বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে 'বিদেশি' সন্দেহ করা হচ্ছে। নিজেকে ভারতীয় বলে প্রমাণ দিন। বৈধ ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও কেন এমন নোটিশ? এই প্রশ্নই তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা কোচবিহারের বাসিন্দাদের। 

কয়েকদিন আগেই দিনহাটা এলাকার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীর বাড়িতে পোঁছেছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল-এর পাঠানো এনআরসি নোটিশ। এবার এনআরসি'র নোটিশ পৌঁছেছে মাথাভাঙ্গা ২ নম্বর ব্লকের লতাপাতা অঞ্চলের বাসিন্দা নিশিকান্ত দাসের কাছে। এরপর থেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগতে শুরু করেছেন তিনি। 

পেশায় ডিম বিক্রেতা নিশিকান্ত জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে তিনি পড়শি রাজ্য অসমে কাজের সূত্রে গিয়েছিলেন। এরপর সেখানেই তাঁকে বাংলাদেশি সন্দেহে অসম পুলিশ আটক করে। যদিও পরে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন কিন্তু এত বছর পর পুরনো সেই ঘটনাই যেন বিভীষিকা হয়ে ফিরে এল তাঁর জীবনে। যার জেরে তাঁর ঘুম , খাওয়া সবই উবে গিয়েছে। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়, জেলার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছে এক অজানা আতঙ্ক। যে আতঙ্কে তাঁরা ভাবছেন, 'এই বুঝি আমার বাড়িতেও চলে এল এনআরসি নোটিশ'!

আরও পড়ুন: কার্গিল যুদ্ধে ভারত এবং পাকিস্তানের কত টাকা খরচ হয়েছিল? আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে কে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল?

অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। এটাই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাঁদের কথায়, 'আমরা জন্মসূত্রে এখানকার বাসিন্দা। আমাদের কাছে সব কাগজপত্র আছে। তবুও যখন শুনছি কারও কারও নামে এই নোটিশ আসছে, তখন আর আত্মবিশ্বাস থাকে না। উল্টে আতঙ্ক তাড়া করে। 

কার্যত এনআরসি ইস্যু এখন আর শুধু একটি নথির বিষয় নয়। এটি একটি সত্ত্বার প্রশ্ন। তাঁর সঙ্গে জুড়েছে নিরাপত্তার প্রশ্ন। আছে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত কী হবে সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা। যা নিয়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন সীমান্তবর্তী এই জেলার বাসিন্দারা। 

আরও পড়ুন: বাজার থেকে যে আলু কিনছেন সেগুলি সত্যিই আলু তো, না কি অন্য কিছু, আসল জিনিস চিনবেন কীভাবে

রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই নোটিশ পাঠানোর ইস্যুটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের কথায়, এটা একটা ষড়যন্ত্র। এনআরসি'র নামে অসম সরকার বাঙালি এবং পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের টার্গেট করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক শনিবার নিশিকান্তর বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিশিকান্তর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে তাঁর পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অভিজিতের কথায়, আমরা কোনোভাবেই অসম সরকারের এই নোটিশ মানি না। সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমরা সর্বতোভাবে তাঁদের পাশে আছি।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের নোটিশ হাতে পাওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রমাণাদি-সহ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল-এর সামনে হাজির হওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। তবে কাগজপত্র যথাযথ থাকলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এবং মানসিক চাপ-এই দুই মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক গভীর অনিশ্চয়তা। যা নিয়ে ঘুমের ঘোরেও চমকে উঠছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা।