আজকাল ওয়েবডেস্ক: কার্গিল যুদ্ধ কেবল একটি সামরিক যুদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল ভারতের শক্তি, বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা এবং আমাদের সৈন্যদের অবিশ্বাস্য সাহসের পরীক্ষা। ১৯৯৯ সালের মে মাসে, পাকিস্তানি সৈন্য এবং জঙ্গিরা ভারতের অংশ, কার্গিল অঞ্চলের উঁচু পর্বতশৃঙ্গ গোপনে দখল করে নেয়, যার ফলে যুদ্ধ শুরু হয়। তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য, ভারত ‘অপারেশন বিজয়’ শুরু করে। যা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই ভারত যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং প্রতিটি শৃঙ্গে গর্বের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। কিন্তু এই বিজয়ের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। শত শত ভারতীয় সৈন্য প্রাণ হারায়। দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং প্রচুর সামরিক সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছিল।
কার্গিল বিজয় দিবসে, আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যুদ্ধের সময় ভারত না পাকিস্তান কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল এবং কাদের এই সংঘর্ষের বেশি মূল্য বহন করতে হয়েছিল।

কার্গিল যুদ্ধ কেবল ভারতের জন্য একটি সামরিক চ্যালেঞ্জ ছিল না, এটি দেশের অর্থনীতিরও পরীক্ষা করেছিল। অনুমান, ভারত এই যুদ্ধে প্রায় পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। ভারতীয় বায়ুসেনা একাই ৩০০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছিল। যার জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। স্থলভাগে, সেনাবাহিনীর দৈনিক অভিযানের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধের চরম সময়ে ভারত প্রতিদিন প্রায় ১,৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল।
এত বিশাল ব্যয়ের পরেও, ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। সেই সময়ে দেশের আর্থিক ভিত্তি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার ছিল ৩৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই দৃঢ় অর্থনৈতিক সহায়তা ভারতকে তার অর্থনীতিকে চাপের মুখে না ফেলে যুদ্ধের খরচ পরিচালনা করতে সাহায্য করেছিল।
আরও পড়ুন: বাজার থেকে যে আলু কিনছেন সেগুলি সত্যিই আলু তো, না কি অন্য কিছু, আসল জিনিস চিনবেন কীভাবে
আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও বেশি মূল্য ভারত দিয়েছে কার্গিল যুদ্ধে ৫২৭ জন সাহসী সৈন্যকে হারিয়ে। ভয়াবহ যুদ্ধে ১,৩৬৩ জনেরও বেশি সৈন্য আহত হয়েছিল। এই আত্মত্যাগ এমন একটি বিষয় যা কখনও অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।
তুলনা করলে দেখা যায়, কার্গিল যুদ্ধে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান অনেক বেশি সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান মাত্র ৩৫৭ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ভারতীয় সেনা বেশি উচ্চতার ঘাঁটিগুলি পুনরুদ্ধার করার পর, তারা শত শত পাকিস্তানি সৈন্যের মৃতদেহ খুঁজে পায়। আশ্চর্যজনকভাবে, পাকিস্তান সেই মৃতদেহগুলির ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের দৈনিক যুদ্ধ ব্যয় ছিল প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা, যা ভারতের তুলনায় কম। কিন্তু পাকিস্তানের অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনেক বেশি ছিল।
যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তান কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী তাদের সুনামও নষ্ট করেছে। লাহোর ঘোষণাপত্র (ভারতের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি) স্বাক্ষর করার মাত্র কয়েক মাস পরে, কার্গিলে অনুপ্রবেশকে বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসঘাতকতা এবং যুদ্ধের জন্য পরিকল্পিত কাজ হিসেবে দেখা হয়েছিল। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
