আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাশ্মীরের অনন্তনাগে ভয়াবহ তুষারঝড়ে শহিদ হলেন বাংলার এক বীর সেনা। বীরভূমের রাজনগর ব্লকের ভবানীপুর পঞ্চায়েতের কুণ্ডীরা গ্রামের বাসিন্দা সুজয় ঘোষ (২৭) সেনা অভিযানের সময় প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি ছিলেন দেশের এলিট প্যারা কমান্ডো ইউনিটের সদস্য। শুক্রবারের ঘটনায় তাঁর গ্রাম কুণ্ডীরা থেকে গোটা জেলা জুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।

 

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে সেনাবাহিনীর তরফে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, কাশ্মীরের অনন্তনাগে অভিযানের সময় তুষারঝড়ে গুরুতর জখম হন সুজয়। তাঁকে উদ্ধার করে সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই আসে মর্মান্তিক খবর—বাঁচানো যায়নি সুজয়কে। শনিবার দুপুরে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনোর কথা। প্রশাসনের তরফে শহিদের মরদেহ গ্রহণ ও শেষ শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

 

সুজয় ঘোষের পরিবারে রয়েছেন বাবা রাধেশ্যাম ঘোষ, মা নমিতা ঘোষ, দাদা মৃত্যঞ্জয় ঘোষ, দাদু বামাপদ ঘোষ এবং ছোট ভাই। পরিবারটির আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্যই বছর সাতেক আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন সুজয়। তাঁর যোগদানের পর থেকেই সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। সেনাবাহিনীতে কর্তব্যরত অবস্থায় নিজের দায়িত্ব ও দেশের প্রতি কর্তব্যে কখনও অবহেলা করেননি তিনি—এমনটাই জানা গিয়েছে সেনা সূত্র মারফত।

 

দাদু বামাপদ ঘোষ বলেন, 'খুবই শান্ত-স্বভাবের, হাসিখুশি ছেলে ছিল । গ্রামে এলেই সবার সঙ্গে মিশে যেত। ছোট বড় সবার প্রিয় ছিল। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। আজ গোটা গ্রাম যেন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।”

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় সুজয় ছিলেন কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার উচ্চতর তুষারঢাকা এলাকায় সেনা অভিযানে। প্রবল তুষারপাত ও হঠাৎ ঝড়ের কারণে পাহাড়ি ঢালে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। প্রাকৃতিক পরিস্থিতি এতটাই কঠিন ছিল যে উদ্ধারকার্য চালাতেও সেনাদের প্রবল অসুবিধা হয়।

 

ঘটনার পর থেকেই প্রশাসনের তরফে শহিদ সেনার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বীরভূম জেলা পুলিস সুপার আমনদীপ সিং বলেন, 'এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা শহিদ সেনার পরিবারের পাশে আছি এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।'

আরও পড়ুন: 'প্রথম দেখাতেই অন্তঃসত্ত্বা'! প্রেমের টানে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এ কী ঘটালেন যুবতী? নেটপাড়ায় কটাক্ষ পিছু ছাড়ছেনা 

শনিবার দুপুরে যখন সেনাবাহিনীর কনভয়ে করে শহিদের মরদেহ পৌঁছবে কুণ্ডীরা গ্রামে, তখন পুরো এলাকা দেশপ্রেমের আবেগে ভরে উঠবে, জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। একদিকে বীর সন্তানের মৃত্যুতে শোক, অন্যদিকে দেশের জন্য আত্মবলিদান দেওয়া এক সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা—এই দুই অনুভূতির মিশ্র আবেগে ভরে উঠেছে সমগ্র রাজনগর ও আশপাশের গ্রামাঞ্চল। এই শহিদ বীর সেনার আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে বীরভূমবাসীর হৃদয়ে এমনটাই বলছেন শহীদের প্রতিবেশীরা।