শ্রেয়সী পাল: এক হাতে ধরা রয়েছে একটি ধারালো ছুরি, আর অন্য হাতে বড় হাঁসুয়া। এই অবস্থায় ক্রমাগত এক ব্যক্তি সকলকে হুমকি দিয়ে চলেছেন। বলছেন, ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলেই ছুরির ডগায় থাকা এক নাবালিকাকে খুন করবেন তিনি। হাড়হিম করা এমন দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন সকলে।
কোনওভাবেই ওই ব্যক্তিকে নিরস্ত্র করতে না পেরে শেষে গ্রামের সকলে খবর দেয় স্থানীয় শক্তিপুর থানায়। তারপরই থানার এক সহকারী সাব -ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের পরিচয় দেন। তিনি যেভাবে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করলেন সেই ভিডিও এখন ভাইরাল।
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার কুমারসানি রাজ বলেন, "ঘটনাটি ঘটেছে দু'দিন আগে মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর থানা এলাকায়। সেদিন আমরা খবর পাই এক ব্যক্তি এক নাবালিকাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে ছুরি দেখিয়ে ক্রমাগত খুন করার হুমকি দিচ্ছেন। সেই সময় থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে অভিযুক্ত সঙ্গে কথা বলে প্রথমে তার 'ব্রেন ওয়াশ' করেন। এরপর দ্রুত পদক্ষেপ করে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করেন।"
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই ওই এএসআইকে পুলিশ সুপারের তরফ থেকে কর্মদক্ষতার জন্য পুরস্কৃত করা হবে।
শক্তিপুর থানার এক আধিকারিক জানান, দিন দু'য়েক আগে তারা মিল্কি গ্রাম থেকে খবর পান মইদুল শেখ নামে এক বছর পঁয়ত্রিশের ব্যক্তি নিজের শ্যালিকার মেয়েকে একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং ক্রমাগত তাকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলেছেন।
পুলিশের ওই অধিকারী বলেন, "মইদুল শেখ সাধারণ সব্জি বিক্রেতা হিসেবে গ্রামে ঘুরে ঘুরে সব্জি বিক্রি করেন। তার দুই নাবালক সন্তান ছাড়াও স্ত্রী রয়েছেন। ঘটনার দিন সকালে মইদুল শক্তিপুর থানারই বালিহারপাড়া গ্রামে নিজের শ্যালিকার বাড়িতে কোনও একটি কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে কিছুক্ষণ কাটানোর পর শ্যালিকার ১১ বছরের মেয়েকে মোটরসাইকেলের চড়িয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন মইদুল।|"
পুলিশ সূত্রে খবর, এরপর শ্যালিকার মেয়েকে একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাকে কয়েকটি কেক ও বিস্কুট খেতে দেন মইদুল। এর কিছুক্ষণ পর ওই ঘরে তিনি নিজে ঢুকে পড়েন এবং দরজা আটকে দেন। যদিও ঘরের একটি জানলা তিনি খোলা রেখেছিলেন। ওই জানলা দিয়ে সে সকলকে হুমকি দিতে শুরু করে যে, ঘরে যদি জোর করে কেউ ঢোকার চেষ্টা করে তাহলে তাঁর সঙ্গে থাকা নাবালিকাকে কুপিয়ে খুন করবেন তিনি।
বহুবার বোঝানোর পরও মইদুল দরজা খুলতে রাজি না হওয়ায় গ্রামবাসীরা শক্তিপুর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসেও তাকে বহুরকম ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে। যদিও মইদুল সহজে পুলিশের কথা শুনতে রাজি হয়নি। এরপরই এএসআই শফিকুল ইসলাম নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে চকিতে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মইদুলকে কাবু করে ফেলেন এবং তাঁর হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রগুলি দ্রুত সরিয়ে দেন।
এই ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে বেশ কিছু উত্তেজিত গ্রামবাসী ওই ঘরে ঢুকে মইদুলকে মারধরের চেষ্টা করলেও শফিকুল এবং অন্য পুলিশ কর্মীরা দ্রুত ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন এবং মইদুলকেও সুরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মইদুলের বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক সমস্যা রয়েছে। এর জন্য তার চিকিৎসা চলছে। প্রায় ২ বছর আগেও এই ধরনের একটি ঘটনা সে ঘটিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনার পরই মইদুলকে মানসিক চিকিৎসার জন্য বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তার চিকিৎসা করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় হতবাক মইদুল এবং তার শ্যালিকার পরিবারের সদস্যরা। সূত্রের খবর, মইদুলের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।
তবে মইদুল এবং তাঁর শ্যালিকার পরিবারের তরফ থেকে পুলিশের ভূমিকার উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়েছে। তারা বলেন, "আমরা জানতাম মইদুলের কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এরকম ভয়ানক কান্ড সে যে ঘটাতে পারে তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। আমাদের বাড়ির ছোট্ট মেয়েকে পুলিশ যেভাবে উদ্ধার করে দিয়েছে তার প্রশংসা করার ভাষা আমাদের কাছে নেই।"
