আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের নানা রাজ্যে ক্রমাগত হেনস্থার শিকার বাংলাভাষীরা। ক্রমাগত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার, বাংলা ভাষার উপর অবমানায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদের রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিলেন। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শনি রবিবার প্রতিবাদ সভা করে। সোমবার সকাল থেকে ছবি কিছুটা ভিন্ন। সেনার তরফে, ওই সভার মঞ্চ খুলে ফেলার তোড়জোড় করা হচ্ছিল। কারণ হিসেবে জানা যায়, গান্ধীমূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ সভার অনুমতি ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সেই কারণেই ১ সেপ্টেম্বর খুলে ফেলা হচ্ছে মঞ্চ।
সোমবার দুপুরেই গান্ধীমূর্তির পাদদেশে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সাফ জানিয়ে দিলেন, পরিস্থিতি যাই হোক, বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ চলবেই। বললেন, 'ধর্না চলবেই।' তারজন্য পথ বাতলে দিলেন তিনি নিজেই।
শুরুতেই মমতা বলেন, 'আমাদের মাইকের কানেকশন কেটে দিয়েছে, মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে, প্যান্ডেল সেনাকে দিয়ে খুলিয়েছে।' সেনা মঞ্চ খুললেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী একেবারে শুরুতেই স্পষ্ট করে দেন, তাঁর সেনাকে নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই। তিনি ভারতীয় সেনার উপর গর্বিত বোধ করেন। মমতা বলেন, 'সেনাকে যখন বিজেপির কথায় চলতে হয়, তখন দেশটা কোথায় যায়, সন্দেহ জাগে।' ভাষা আন্দোলনের অনুষ্ঠান মূলত হয় শনি-রবিবার। রাস্তা বন্ধ করে হয় না তা, সেসব উল্লেখ করেই মমতা জানান, অনুমতি নেওয়া ছিল। প্রয়োজনে পুলিশকে জানানো হত, পুলিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে কর্মসূচির স্থান বদলানো হত। কিন্তু আচমকা কেন মঞ্চ খুলে দেওয়া? তিনি বলেন, 'আমরা ভারতীয় সেনাকে হৃদয় থেকে সম্মানে করি। মেয়ো রোডে যা ঘটেছে, তা সেনার কাজ নয়, এটি বিজেপির ক্ষমতার অপব্যবহার। পূর্বে অনুমতি এবং সিকিউরিটি ডিপোজিট দেওয়ার সত্বেও ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদ মঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়।'
আরও পড়ুন: ফের নিম্নচাপ, বাংলায় আবারও ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস! কোন জেলায় কবে কবে?
মমতা বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে যেতেই প্রায় ২০০ সেনা দৌড়ে চলে যান ঘটনাস্থল থেকে। মমতার তীব্র কটাক্ষ বিজেপির প্রতি। তাঁর মতে এই গোটা ঘটনায় হাত রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গেরুয়া শিবির সেনার অপব্যবহার করছে বলেও সুর চড়ান তিনি।
এদিন মমতা জানিয়ে দেন, ভাষা আন্দোলন চলবে, ধর্না চলবেই। এবার তা হবে রানি রাসমণি রোড-এ। তিনি বলেন, 'পুলিশের থেকে অনুমতি নিয়েছি, বিনা অনুমতিতে আমরা ২১শে জুলাইও করি না। আমরা কর্মসূচি রানি রাসমণি রোড-এ স্থানান্তর করছি।' এদিনের ঘটনার পর, মুখ্যমন্ত্রী বেশকিছু প্রশ্নও সামনে রাখেন। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, 'ব্রিগেডে আমরা কোনও দিন মিটিং করতে পারব না? সেনা অনুমতি দেবে না? গান্ধী মূর্তিতে আমরা কোনওদিন আসতে পারব না? সেনাকে অনুমতি দিতে দেবে না? তাহলে কি রেড রোডে আমরা কোনওদিন অনুষ্ঠান করতে পারব না?'
মমতা এদিন বলেন, বাংলার মানুষ, আরও বেশি করে বাংলায় কথা বলুন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। আরও জোরদার হবে। আজকে যে ঘটনা ঘটিয়েছে বিজেপি, তার বিরুদ্ধে আগামী কাল বেলা দুটো থেকে চারটে সব ব্লকে ব্লকে, জেলায় জেলায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মসূচি চলবে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রানি রাসমণি রোডে শুরু হবে প্রতিবাদ কর্মসূচি। শনি-রবির বদলে, প্রতিবাদ কর্মসূচি এবার থেকে চলবে প্রতিদিন, এদিন তাও জানালেন মমতা।
