আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি নদিয়ার শান্তিপুর শহরে একের পর এক চুরির ঘটনায় কিছুটা আতঙ্কের, সঙ্গে চাঞ্চল্যও ছড়িয়েছে। কখনও পুরসভার কর্মীর ব্যাগ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা উধাও, আবার কখনও প্রকাশ্য রাস্তায় ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটেছে। কখনও বা হরিপুরে এক মহিলার বাড়িতে দু:সাহসিক চুরি। এই ধরনের ঘটনাগুলোর জন্য সবমিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অদ্ভুত পরিবেশ। নাগরিকদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অপরাধ চক্র। দীর্ঘদিন ধরে তদন্তের পর এই মামলাগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আছে এই অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সম্প্রতি শান্তিপুর শহরে একটি মোটরবাইক চুরি হয়। ওই অপরাধের ঘটনায় সিসিটিভিতে দেখার পর পুলিশ তন্ময় রায় বলে একজনের সন্ধান পায়। এরপর সিসিটিভিতে দেখা সেই ব্যক্তির সন্ধান বহু কষ্টে পায় পুলিশ। শেষপর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত তন্ময় রায় নদিয়া জেলারই বাদকুল্লার বাসিন্দা। গ্রেপ্তারের পর তাকে লকআপে ভরতেই তৈরি হয় এক নতুন সমস্যা। কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শহরের অন্যান্য বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় বিশেষত মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তন্ময়কে গত প্রায় এক বছর ধরে খোঁজা হচ্ছিল। তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্তও সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু খাবার দিতে গেলে দেখা যায় সে কিছুতেই খাচ্ছে না। একের পর এক খাবারের যেমন রুটি এমনকী পোলাও বা মাংসের কথা বলা হলেও তন্ময় খেতে চায়নি। সব খাবার ফিরিয়ে দিয়ে তার মুখে একটাই কথা, 'আলুভাজা খাব'। উপায় না পেয়ে সকাল, বিকাল এবং রাত, এই তিন বেলাতেই তন্ময়ের জন্য আলুভাজার ব্যবস্থা করছে থানার পুলিশ।
তন্ময়ের এই আচরণে থানার ভিতরেও চলছে আলোচনা। কীভাবে ধৃতের এই ব্যাপারটা সামাল দেওয়া যায়। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এইভাবে বায়না মেটাতে গিয়ে এরপর যদি দেখা যায় বাকিদের কেউ বলছে নবদ্বীপের দই বা বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা ছাড়া সে কিছু খাবে না তবে তো মুসকিলে পড়তে হবে। কারণ, সরকারি নিয়ম মেনেই অভিযুক্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে যদি একের পর এক এই ধরনের বায়না নিয়ে অভিযুক্তরা হাজির হয়, তবে সেটা সামাল দিতে গিয়ে তো বড় সমস্যায় পড়তে হবে। যদিও তন্ময় প্রসঙ্গে একটি সূত্র জানায়, এই বিশেষ 'আলুভাজা'র চাহিদা নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা কমছে না। কারণ, তার জন্য আলুভাজার 'স্টক' রাখতেই হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, তন্ময়ের এই আবদার চাউর হয়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ। কেউ কেউ বলছেন, 'চোর নয়। রীতিমতো ফুড-ব্লগার'। কেউ বলছেন, 'আলুভাজার টান বড় টান, চোরেরও লাগে মান'। আবার একজন লিখেছেন, 'চোরের দাবি মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পরেও ঝামেলা মেটেনি।' তবে তন্ময়ের গ্রেপ্তারের পর খানিকটা স্বস্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা। আগামী দিনে নদিয়ায় চুরির ঘটনায় রাশ টানা যায় কিনা, তার দিকেই মুখিয়ে রয়েছেন সকলে।
