আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছে প্রদীপের সারি, বাতাসে উৎসবের গন্ধ। দীপাবলি মানেই খুশির রোশনাই। শিশুদের কাছে দীপাবলির অন্যতম আকর্ষণ হল বাজি পোড়ানো। বারণ সত্ত্বেও খুদেদের বাজি পোড়ানোর আবদার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কঠিন। কিন্তু এই আনন্দের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে মারাত্মক বিপদ। বাজির বিষাক্ত ধোঁয়া শিশুদের নরম ফুসফুসের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা নিয়ে বারবার সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। উৎসবের আবহেও তাই অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বাজি তো পুড়বেই, কিন্তু তার মধ্যেও কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনার সন্তানকে? রইল কিছু জরুরি পরামর্শ।

 

প্রথম বর্ম মাস্ক

শিশুকে বাজি পোড়ানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে তার মুখে অবশ্যই একটি ভাল মানের (এন-৯৫ বা এন-৯৯) মাস্ক পরিয়ে দিন। সাধারণ কাপড়ের মাস্ক কিন্তু এই বিষাক্ত কণা আটকাতে পুরোপুরি সক্ষম নয়। বাজির ধোঁয়ায় থাকা সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং ভারী ধাতুর কণা শ্বাসের সঙ্গে সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। মাস্ক ব্যবহারের ফলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

আরও পড়ুন: বাতের ব্যথা সারাতে বাঘের মূত্র পান করছে চিনারা! প্রতিবেশী দেশের কাণ্ডে ছিছিক্কার বিশ্বজুড়ে

স্থান এবং সময় নির্বাচন জরুরি

চেষ্টা করুন বাড়ির ছাদ বা একেবারে লাগোয়া গলির বদলে কোনও ফাঁকা মাঠে বা পার্কে বাজি পোড়ানোর ব্যবস্থা করতে। এতে ধোঁয়া এক জায়গায় জমে থাকবে না, সহজেই বাতাসে মিশে যাবে। পাশাপাশি, একেবারে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে বাজি না পুড়িয়ে অন্য সময় পোড়ানোই শ্রেয়। কারণ, দিনের শেষে বাতাসে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। বাজির ধোঁয়া সেই দূষণকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে।

 

ঘরের ভিতর চাই সতর্কতা

বাজি পোড়ানো শেষ হলে বা শিশু বাইরে থেকে ঘুরে এলেই তার জামাকাপড় বদলে দিন। ভাল করে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুইয়ে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দীপাবলির সন্ধ্যায় বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বাইরের বিষাক্ত ধোঁয়া সহজে ঘরে ঢুকতে পারবে না। বাড়িতে এয়ার পিউরিফায়ার থাকলে তা অবশ্যই চালিয়ে রাখুন। না থাকলে জানলার ধারে বা দরজার নিচে ভেজা কাপড় দিয়ে রাখতে পারেন, যা ধূলিকণা আটকাতে কিছুটা সাহায্য করবে।

খাদ্যাভ্যাসেও চাই পরিবর্তন

এই সময়ে শিশুর খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, যেমন- লেবু, আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি যোগ করুন। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কিছুটা শক্তি জোগায়। এছাড়াও, শিশুকে প্রচুর পরিমাণে জল পান করান। তুলসী পাতা, আদা, মধু এবং সামান্য গুড় দিয়ে তৈরি ঘরোয়া পানীয় বা কাড়া খাওয়াতে পারেন। এগুলি গলা পরিষ্কার রাখতে এবং শ্বাসনালীর সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁপানি বা অন্য কোনও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে সেই শিশুকে বাজি পোড়ানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত রাখা উচিত। উৎসবের আনন্দ নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু তা যেন কোনওভাবেই শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে। সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই আলোর এই উৎসব আপনার সন্তানের জন্য হয়ে উঠতে পারে সুরক্ষিত এবং আনন্দময়।