আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব, আর সোনা কেনা মানে শুভ লক্ষণ। অনেকেই এই সময়ে সোনার গয়না, কয়েন বা ছোট বার কিনে থাকেন সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বা প্রিয়জনকে উপহার দিতে। তবে সোনার দাম যখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে, তখন কেনার আগে এর কর সম্পর্কিত নিয়ম জানা অত্যন্ত জরুরি।


ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সোনা কেনা
যদি আপনি নিজের ব্যবহারের জন্য সোনা কেনেন, অর্থাৎ নিজের টাকায় গয়না, কয়েন বা বার ক্রয় করেন, তাহলে কেনার সময় কোনো ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না।
তবে, GST (পণ্য ও পরিষেবা কর) দিতে হয়—
সোনার মূল্যের ওপর ৩% GST
এবং মেকিং চার্জের ওপর ৫% GST
অর্থাৎ, ১ লক্ষ টাকার সোনা কিনলে প্রায় ৩,০০০ টাকা GST দিতে হবে, এবং মেকিং চার্জ ধরলে আরও কিছু অতিরিক্ত কর যুক্ত হবে।


উপহার হিসেবে সোনা দেওয়া বা পাওয়া
দীপাবলিতে সোনা উপহার দেওয়া বা পাওয়া অনেকের ঐতিহ্য। কিন্তু এর করের নিয়ম নির্ভর করে কে দিচ্ছেন এবং সোনার মূল্য কত তার ওপর।
আয়কর আইনের Section 56(2)(x) অনুযায়ী, কেউ যদি কোনও সম্পত্তি (যেমন সোনা, গয়না, শেয়ার বা জমি) বিনা মূল্যে বা নামমাত্র দামে উপহার হিসেবে পান, তাহলে সেটি “Income from Other Sources” হিসেবে করযোগ্য হতে পারে।

আরও পড়ুন: বিহারে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ফের নীতীশ কুমার? জল্পনা বাড়ালেন অমিত শাহ


তবে এখানেই কিছু ছাড়ের নিয়ম আছে 
পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া সোনা সম্পূর্ণ করমুক্ত। এদের মধ্যে পড়েন বাবা-মা, স্বামী/স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান ও নাতি-নাতনি, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। অর্থাৎ, দীপাবলিতে যদি এই আত্মীয়দের কাছ থেকে সোনা পান, তবে তার ওপর কোনও ইনকাম ট্যাক্স প্রযোজ্য নয়।
বিয়ের সময় পাওয়া সোনা সম্পূর্ণ করমুক্ত, সেটা যেই দিক না কেন বা যত মূল্যেরই হোক। তবে এই ছাড় কেবল বিয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, দীপাবলি, জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীতে নয়।


সোনা বিক্রি করলে কর কীভাবে প্রযোজ্য হবে?
আপনি যদি ভবিষ্যতে সোনা বিক্রি করে লাভ করেন, তবে সেই লাভের ওপর কর দিতে হবে। করের ধরন নির্ভর করে আপনি কতদিন ধরে সোনা রেখেছেন তার ওপর। 
৩ বছরের মধ্যে বিক্রি করলে: লাভকে ধরা হবে স্বল্পমেয়াদি মূলধনী লাভ হিসেবে। এই লাভ আপনার মোট আয়ের সঙ্গে যোগ হবে এবং আপনার ইনকাম ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী কর ধার্য হবে।
৩ বছরের পর বিক্রি করলে: লাভ ধরা হবে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ হিসেবে। এর ওপর কর দিতে হয় ২০% হারে, সঙ্গে Indexation-এর সুবিধা পাওয়া যায়—যার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির জন্য সোনার ক্রয়মূল্য সমন্বয় করে করযোগ্য পরিমাণ কমে যায়।


কিছু দরকারি পরামর্শ
সোনা কেনার সময় ইনভয়েস বা বিল সংরক্ষণ করুন।
উপহার হিসেবে পেলে গিফট রিসিট বা দাতার প্রমাণ রাখুন।


এগুলো ভবিষ্যতে বিক্রির সময় মূলধনী লাভ হিসাব করতে বা আয়কর দপ্তরের প্রশ্নের জবাব দিতে কাজে লাগবে। সোনার কেনাবেচা বা উপহার সবসময় শুভ বলে ধরা হয়, কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত করের নিয়ম না জানলে আনন্দের জায়গায় ঝামেলা তৈরি হতে পারে। সচেতনভাবে পরিকল্পনা করলে দীপাবলির সোনা শুধু সমৃদ্ধি নয়, মানসিক শান্তিও আনবে—কোনও অপ্রত্যাশিত ট্যাক্স নোটিশ নয়।