আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালে ফিজিওলজি বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করল সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট। জানানো হয়েছে, এই বছর পুরস্কার পাচ্ছেন তিনজন ইমিউনোলজিস্ট। তাঁরা হলেন মেরি ই. ব্রানকো, ফ্রেড র‍্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থা কীভাবে নিজেদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে, সেই রহস্য উন্মোচন করেছেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁদের আবিষ্কার অটোইমিউন রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলেছে।

মেরি ই. ব্রানকো (জন্ম ১৯৬১) প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং বর্তমানে সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার। ফ্রেড র‍্যামসডেল (জন্ম ১৯৬০) ১৯৮৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকসের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা। অন্যদিকে, শিমন সাকাগুচি (জন্ম ১৯৫১) কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এমডি ও ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারের বিশিষ্ট অধ্যাপক।

তিন বিজ্ঞানী মিলে এক অভূতপূর্ব আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, শরীরের ‘রক্ষাকবচ’ নিয়ন্ত্রণকারী কোষ অর্থাৎ মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম প্রতিদিন অসংখ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু অনেক প্যাথোজেন মানব কোষের অনুকরণ করে ইমিউন সিস্টেমকে বিভ্রান্ত করে। ফলে প্রতিরোধব্যবস্থাকে শিখতে হয় কীভাবে ‘নিজ’ ও ‘অন্য’ কোষকে আলাদা করা যায়। এই জটিল প্রশ্নের উত্তর দেন এই তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা আবিষ্কার করেন ‘রেগুলেটরি টি সেল’, এক বিশেষ শ্রেণির ইমিউন কোষ যা শরীরকে নিজের টিস্যু আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 6, 2025

১৯৯৫ সালে শিমন সাকাগুচি প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। সেই সময় মানুষের মনে প্রচলিত ধারণা ছিল, ইমিউন সহনশীলতা (immune tolerance) কেবলমাত্র থাইমাসে ক্ষতিকর কোষ ধ্বংসের মাধ্যমে বজায় থাকে। সাকাগুচি দেখান, শরীরে আরও একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে—রেগুলেটরি টি সেল—যা অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে। ২০০১ সালে মেরি ব্রানকো ও ফ্রেড র‍্যামসডেল ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে Foxp3 নামের এক জিন শনাক্ত করেন। জানা যায়, এই জিনে ত্রুটি ঘটলে ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অটোইমিউন রোগ দেখা দেয়।

তাঁরা আরও প্রমাণ করেন, মানুষের ক্ষেত্রেও এই জিনে মিউটেশন ঘটলে বিরল কিন্তু মারাত্মক IPEX সিন্ড্রোম দেখা দেয়। তার দু’বছর পর সাকাগুচি আবিষ্কার করে, Foxp3 জিনই রেগুলেটরি টি-সেলের বিকাশ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এই আবিষ্কার ইমিউনোলজিতে নতুন দিক খুলে দেয়। এই প্রসঙ্গে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ওলে ক্যাম্পে বলেন, ‘তাঁদের আবিষ্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মেচন করেছে। এই আবিষ্কার আমাদের বোঝাতে সাহায্য করেছে কেন আমরা সকলে অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হই না।’ এই গবেষণা বর্তমানে অটোইমিউন রোগ, ক্যানসার এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় নতুন আশা জাগাচ্ছে। Foxp3-নির্ভর থেরাপি ইতিমধ্যেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে, যা ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ রোগীর জীবনে আলো আনতে পারে।