আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভালবাসা বা ভাল লাগার সংজ্ঞা কী? কারও পছন্দ মানুষ, কারও আবার জীবজন্তু। কিন্তু আমেরিকার টেক্সাসের বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সি জুলিয়াসের ভালবাসার কথা শুনলে চমকে উঠতে হয়। তিনি ভালবেসে ফেলেছেন বেলুনকে! তাঁর এই বিচিত্র নেশা বা আবেগের কাহিনি তুলে ধরেছে জনপ্রিয় টিভি শো ‘মাই স্ট্রেঞ্জ অ্যাডিকশন’। আর সেই কাহিনি সামনে আসতেই তাজ্জব বনে গিয়েছে গোটা বিশ্ব।
এল পাসোর বাসিন্দা জুলিয়াস জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে ৫০ হাজারেরও বেশি বেলুন রয়েছে এবং প্রত্যেকটির সঙ্গে তাঁর এক বিশেষ ‘আত্মিক যোগ’ রয়েছে। তাঁর কথায়, “আমি জানি যে বেলুন জীবন্ত নয়, কিন্তু কখনও কখনও আমার মনে হয়, ওদের প্রতি আমার ভালবাসাই হয়তো ওদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে।” এই ভালবাসার প্রকাশও বেশ অদ্ভুত। তিনি বেলুনকে জড়িয়ে ধরেন, এমনকি চুমুও খান। জুলিয়াসের অকপট স্বীকারোক্তি, “বেলুনকে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়ার অনুভূতি স্বর্গের মতো। আপনি কি আপনার ভালবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে পছন্দ করেন না?”

জুলিয়াসের পছন্দ-অপছন্দও বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, “যেমন কারও শ্যামাঙ্গী নারী পছন্দ, কারও আবার স্বর্ণকেশী নারী পছন্দ” তেমনই তাঁর পছন্দ স্বচ্ছ, স্বচ্ছ বেলুন। লম্বা, গোল- সবই তাঁর ভাল লাগে, তবে গোলাকৃতি বেলুনই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। তাঁর এই নেশা এতটাই তীব্র যে, বাড়িতে একটি গোটা ঘর তিনি উৎসর্গ করেছেন শুধুমাত্র বেলুনের জন্য। সেই ঘরকে তিনি তাঁর ‘বেলুনের স্বর্গ’ বা ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ বলে ডাকেন। প্রতি রাতে কয়েকটি বেলুনের নিচে না শুলে তাঁর ঘুমই আসে না।
তবে এর নেপথ্যের কাহিনিটি কিন্তু করুণ। এই অদ্ভুত প্রেমকাহিনীর সূচনা হয়েছিল শৈশবের এক যন্ত্রণা থেকে। মাত্র চার বছর বয়সে জুলিয়াস যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখন তাঁর মা তাঁকে একটি নীল রঙের বেলুন উপহার দেন। কিন্তু সেই রাতেই এক নার্স ভুলবশত বেলুনটি ফাটিয়ে দেন। সেই ঘটনায় ছোট্ট জুলিয়াস কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর থেকে বেলুন ফাটার শব্দ তাঁর কাছে এক দুঃস্বপ্নের মতো, যা তাঁকে আজও আতঙ্কিত করে তোলে।
তবে জুলিয়াসের এই আবেগ নিছক শখের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি স্বীকার করেছেন, সুন্দর বেলুন দেখলে তিনি যৌন উত্তেজনাও অনুভব করেন। এই ধরনের ফেটিশিজম যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ‘লুনার’ বলা হয়। জুলিয়াসের মতে, ‘লুনার’ গোষ্ঠীতে দুই ধরনের মানুষ আছেন- একদল, যাঁরা বেলুন ফাটিয়ে আনন্দ পান (পপার), এবং দ্বিতীয় দল, যাঁরা তা করেন না (নন-পপার)। জুলিয়াস গর্বের সঙ্গে নিজেকে ‘নন-পপার’ বলে পরিচয় দেন।
তিনি বেলুন ফাটানোর ঘোর বিরোধী। বরং তিনি ‘বেলুন উদ্ধার’ অভিযানে নামেন। বিভিন্ন গাড়ির শোরুম বা দোকানে যে বেলুনগুলি ফেটে যেতে পারে বলে তাঁর মনে হয়, সেগুলিকে তিনি ‘উদ্ধার’ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে তিনি বেলুনগুলিকে দ্বিতীয় জীবন দেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, জুলিয়াসের একজন স্ত্রী রয়েছেন। তিনি স্বামীর এই অদ্ভুত খেয়ালকে আজব মনে করলেও, বিরোধিতা করেন না। জুলিয়াসের কথায়, “আমার স্ত্রী বেলুনকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেন না এবং এতে আমাদের সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়েনি।” জুলিয়াস মনে করেন, তাঁর এই ভালবাসা সম্পূর্ণ নিরীহ। তাঁর কথায়, “বেলুনকে ভালবাসার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। এটা বিপজ্জনক নয় এবং এতে কারও কোনও ক্ষতি হচ্ছে না।”
