বাঙালির সারা বছর শরীরের দিকে তাকানোর ফুরসত না হলেও পুজোর আগে চাই মেদহীন চেহারা। কারওর শখ করে কেনা পছন্দের পোশাকে ফিট হতে হবে, কেউ আবার উৎসবের দিনে ছিপছিপে চেহারায় তাক লাগাতে চান প্রিয় মানুষকে। তারকাদের মতো চেহারা না পেলে আর কিসের পুজোর সাজ! এদিকে পুজোর যে আর হাতে গোনা মাত্র কয়েক দিন বাকি। আদা-জল খেয়ে মেদ কমানোর এই তো সময়! সমাজ মাধ্যমের হরেক ডিটক্স পানীয় থেকে ঘি-কফি, লেবুর রকমারি ভাইরাল রিলস তো রয়েইছে। সঙ্গে হাতের নাগালে গুগল বা চ্যাটজিপিটির রকমারি ডায়েটের পরামর্শ। যাতে দিব্যি ভরসা করে কম সময়ে ওজন কমাতে, বিশেষ করে বহু দিনের অবাধ্য ভুঁড়ি ভ্যানিস করার ঝোঁক দেখা যায় অনেকের মধ্যেই। কিন্তু চটজলদি ওজন কমানো কি আদৌ স্বাস্থ্যকর? এই প্রবণতায় পুষ্টি অধরা থাকছে না তো? জেনে নেওয়া যাক-
আজকাল ওজন কমানোর নানা উপায় বাতলে দেন সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা। সে সব দেখেশুনে কেউ মেনে চলেন কঠোর ডায়েট, কারওর শরীরচর্চায় মন থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাতে সাময়িক লাভ হয়, ওজনও কমতে পারে। কিন্তু এই মেদ ঝরনোর প্রক্রিয়া স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বিশেষ ডায়েটের পথে হাঁটা উচিত নয় বলেই মনে করেন ডাঃ অনন্যা ভৌমিক। তাঁর কথায়, কম সময়ে ওজন কমানো অসম্ভব, এই ধারণা যে পুরোপুরি ঠিক তা বলা যায় না৷ চরিত্রের জন্য অনেক তারকাকে চটজলদি ওজন কমাতে হয়৷ খানিকটা বেশি কসরত করলে ১৫ দিনে ৫ কেজি কমানোর ভাবনাও অমূলক নয়। তবে তার জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞের ধারাবাহিক মনিটরিং। ইউটিউব, চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে কিংবা নিজেই ঠিক করে কোনও নির্দিষ্ট ডায়েট শুরু করা উচিত নয়।
প্রত্যেক মানুষের শরীর আলাদা হয়। পার্থক্য রয়েছে সকলের খাদ্যাভাস, জীবনযাপনের মধ্যেও। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ডায়েট করলে প্রাথমিকভাবে ওজন হয়তো কমবে, কিন্তু উল্টে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। কিছু দিনের মধ্যে ফিরে আসতে পারে পুরনো ওজন। ডাঃ অনন্যা ভৌমিকের মতে, পুজোর আগে কড়া ডায়েট, পুজোর দিনগুলোয় জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া, তারপর আবার ডায়েটের দিকে না গিয়ে সাধারণ জীবনযাপনে ফিরলে শুধু ওজনই ফের দ্রুত গতিতে বাড়ে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। না খেয়ে রোগা হব, আবার খেয়ে মোটা হব-এভাবে চলতে থাকলে মেটাবলিজম কমে যায়। তখন কিন্তু ওজন কমানো বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। সঙ্গে হানা দেয় নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যাও।
আরও পড়ুনঃ পুজোর আগে অতিরিক্ত ত্বক-চুলের পরিচর্যা শুরু করেছেন? আচমকা বাড়তি যত্নে উল্টে ক্ষতি হতে পারে!
পুষ্টিবিদ বলেন, “সমাজ মাধ্যমের যুগে চটজলদি ওজন কমাতে অনেক ভূরি ভূরি যাচাই না করা তথ্য রয়েছে। যার ফাঁদে পা দেওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।” বিশেষ করে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখের মতো জটিল রোগ থাকলে বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা, ব্যক্তিবিশেষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করে সঠিক ডায়েট নির্ধারণ করা উচিত। কম সময়ে ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। তাই অবশ্যই একজন পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আচমকা ক্র্যাশ ডায়েট করলে বিগড়াতে পারে শরীর। প্রথমেই যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তা হল, শরীরে এনার্জির অভাব। এছাড়াও ঘুমের সমস্যা, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, চুল পড়া, ত্বকে রুক্ষতা, ঘন ঘন অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে৷ ছয় মাস বা তার বেশি সময় যদি কেউ কোনও পেশাদারের পরামর্শ ছাড়া ক্র্যাশ ডায়েট করেন তাহলে ধীরে ধীরে লিভারের সমস্যা দেখা দেয়, অবসাদ ঘিরে ধরে, গা-হাত-পায়ে ব্যথাও হতে পারে।
পুজো যত এগিয়ে আসে, ততই ফিটনেস নিয়েও খুঁতখুঁতে মনোভাব তৈরি হয়। বছরের এই সময়টায় যেন জিমগুলোতে ‘পরিযায়ী’দের ভিড় বাড়ে। রোগা হওয়ার লক্ষ্যে হঠাৎ করে জিমে অতিরিক্ত ওয়েট লিফটিং কিংবা সারা বছর অভ্যাস না থাকলেও আচমকা দীর্ঘক্ষণ শরীরচর্চা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ডাঃ অনন্যা ভৌমিকের কথায়, কিছুক্ষণের জন্য কার্ডিও করতেই পারেন। তবে কার্ডিও করলেই যে ওজন কমবে এমনটা কিন্তু নয়। পুজোর আগে জিমেও ভর্তি হতে পারেন৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বডি টোনিং সম্ভব। কিন্তু ভারী ওজন নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুস্থতা থাকলে সজাগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া শরীরচর্চা করতে গেলে বিপদ। কম সময়ের মধ্যে কোনও লক্ষ্যের পিছনে না ছুটে ধীরে ধীরে নিজের সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী শরীরচর্চা করলে উপকার পাবেন।

সুফল পেতে মেনে চলুন
* সারাদিনে ৩ লিটার জল খান।
* একনাগাড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
* ভাজাভুজি, ডিপ ফ্রায়েড খাবার বাদ দিন। মিষ্টি খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
* হাঁটাহাঁটি, সিড়ি দিয়ে ওঠানামা, সাঁতার কাটতে পারেন।
* ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। মোটামুটি তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা অন্তর খিদে পাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। দীর্ঘক্ষণ খিদে না পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মন ভাল রাখতে অবসরে বই পড়া, গাছের পরিচর্যা কিংবা নাচ, গান, খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
* রাতের খাবার এবং ঘুমের মধ্যে ২ ঘণ্টার পার্থক্য রাখুন৷ এতে শুধু ওজনই কমবে না, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সুবিধা হবে।
