আজকাল ওয়েবডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং একাধিক ভূমিধসের কারণে ভয়াবহ দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে এই দুর্যোগ জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, অট-লারজি-সেইনজ সড়কের কাছে পাগল নালার আশেপাশে অন্তত ১৫টি পঞ্চায়েত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে অঞ্চলে অঞ্চলে একাধিক ভূমিধসের ফলে চণ্ডীগড়-মানালি জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ রাজ্যজুড়ে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। হিমাচল প্রদেশ রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (HPSDMA) রবিবার সন্ধ্যায় যে তথ্য দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে রাজ্যের প্রায় ৩৫২টি রাস্তা, যার মধ্যে তিনটি জাতীয় সড়ক রয়েছে, সেগুলো এখনও অবরুদ্ধ রয়েছে। এছাড়া, রাজ্যজুড়ে ১,০৬৭টি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার এবং ১১৬টি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে।
শুধু কুল্লু জেলাতেই ৫৫৭টি ট্রান্সফরমার বন্ধ রয়েছে। মান্ডিতে ৩৮৫টি এবং লাহৌল-স্পিতিতে ১১২টি। সম্প্রতি একটি ভয়াবহ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে কুল্লু অঞ্চলে একটি বিশাল ভূমিধস দেখা গিয়েছে। চারিদিকে ধুলো ও ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ মেঘ উপত্যকার সবুজ ঢালু পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে। ধুলোয় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে। ভূমিধসের ভয়াবহতা চারিদিক তছনছ করে ফেলছে। এর ফলে পাহাড় থেকে পাথর ও মাটি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ঘটনার জেরে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী বসতিগুলোর জন্য বিপদ তৈরি হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া আরও একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে চণ্ডীগড়–মানালি জাতীয় সড়ক একাধিক ভূমিধসের কারণে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। এহেন দুর্যোগের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হিমাচল প্রদেশে উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার কাজ যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে চললেও, তা প্রায়শই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভূমিধস, টানা বৃষ্টিপাত ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিবন্ধকতা এর পেছনে কারণ।
হিমাচল প্রদেশ রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, 'মান্ডি, কুল্লু ও লাহৌল-স্পিতি জেলায় পরিস্থিতি এখনও মারাত্মক। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং পানীয় জলের পরিষেবা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।'
২০ জুন থেকে শুরু হওয়া বর্ষার প্রকোপে এ পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (SDMA)। এর মধ্যে ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ভূমিধস, হঠাৎ বন্যা ও বাড়িঘর ধসের মতো বর্ষণজনিত কারণে। বাকি ১২৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, যার পেছনে প্রধান কারণ পিচ্ছিল রাস্তা ও কম দৃশ্যমানতা।
প্রসঙ্গত, মাণ্ডি জেলায় সবচেয়ে বেশি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। মোট ২০১টি রাস্তা, যার মধ্যে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম এনএইচ-০৩ (NH-03) রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুল্লু জেলা, যেখানে ভূমিধসের কারণে ৬৩টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই জেলায় এনএইচ-৩০৫ (NH-305)-এর খানাগ এলাকাতেও রাস্তা বন্ধ রয়েছে। কিন্নোর জেলা থেকেও এনএইচ-০৫ (NH-05)-এর টিনকু নাল্লা অংশে রাস্তা বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
দুর্যোগের জেরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মাণ্ডি জেলায়। খবর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে প্রায় ৪৪৮টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে লাহৌল-স্পিতি জেলায়। সেখানে উচ্চ ভোল্টেজ লাইনের ত্রুটির কারণে ১১২টি ট্রান্সফর্মার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কুল্লু ও মাণ্ডি জেলায় পানীয় জলের প্রকল্পগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে অনেক প্রকল্প ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সিরমৌর জেলার রাজগড়ে ৭২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাদ্রালা (৪২.৪ মিমি), পাছাদ (৩৮ মিমি), মান্ডি (২৬.৪ মিমি), ভুন্টার (২২ মিমি), শিলারু (১৪.২ মিমি), সেওবাগ (১২.২ মিমি), শিমলা (১১.৫ মিমি) এবং রোহরু (১০ মিমি)।
৩০ জুন থেকে ১ জুলাই রাতে মান্ডি জেলায় দশটি মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে ধ্বংসযজ্ঞের পর নিখোঁজ হন ২৭ জন। খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
