আজকাল ওয়েবডেস্ক: আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম জাপান। প্রযুক্তি, শৃঙ্খলা, কর্মসংস্কৃতির জন্য দেশটির সুনাম বিশ্বজোড়া। কিন্তু এই দেশেই রয়েছে এমন এক অদ্ভুত এবং ভয়াবহ সামাজিক প্রবণতা যাতে রাতারাতি গায়েব হয়ে যেতে পারেন যে কোনও ব্যক্তি! জাপানি ভাষায় প্রথাটির নাম ‘জোহাতসু’। জাপানি এই শব্দের অর্থ “বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাওয়া”। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ, সমাজের চোখের সামনে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যান। না খুন, না দুর্ঘটনা বরং তাঁরা নিজেরাই বেছে নেন হারিয়ে যাওয়ার পথ।
কেন অদৃশ্য হতে চান মানুষ?
সমাজের চাপ, ব্যর্থতার বোঝা, আর্থিক ঋণ, কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ, বিভিন্ন কারণে মানুষ জাপানে ‘জোহাতসু’ হয়ে যান। সমাজের চাপে প্রকাশ্যে লজ্জিত হওয়ার থেকে উধাও হয়ে যাওয়া-ই সহজ সমাধান বলে মনে করেন এই ব্যক্তিরা। উদাহরণস্বরূপ, কারও চাকরি চলে গেলে পরিবারে মুখ দেখানো দায় হয়ে যেতে পারে, কেউ আবার এমন ঋণের পাহাড়ে ডুবে যান যে নিজের পরিচয়, পরিবার ও বন্ধুবান্ধব ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
এও এক ধরনের ব্যবসা
এই অদৃশ্য হওয়ার কাজে সাহায্য করে বিশেষ কিছু সংস্থা, যাদের বলা হয় ‘ইওনিগে-ইয়া’। এই শব্দের অর্থ, “রাত্রে পালিয়ে যাওয়ার কোম্পানি।” রাতের অন্ধকারে তারা গ্রাহকের জিনিসপত্র সরিয়ে নেয়। গোপনে নতুন জায়গায় দিয়ে আসে। এমনকিপুরোনো জীবনের সব চিহ্ন মুছে দেয়। এদের কাজ এতটাই নিখুঁত যে পরিবার কিংবা পুলিশও অনেক সময় খুঁজে পায় না হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে।
আইন কী বলছে?
এই প্রথা পুরোপুরি আইনসম্মত নয়, আবার একেবারে বেআইনিও নয়। জাপানে এই ব্যবস্থা একপ্রকার বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি হয় ঠিকই, কিন্তু প্রমাণিত অপরাধ না থাকলে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যায় হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে। তাছাড়া জাপানে ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অদৃশ্য হতে চান, তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনার আইনি ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে।
নতুন জীবন কেমন হয়?
জোহাতসু হয়ে যাওয়া মানে শুধু পরিবার-পরিজন ছেড়ে যাওয়া নয়, পুরনো যাবতীয় পরিচয় মুছে দিয়ে একেবারে নতুন জীবন শুরু করা। অনেকেই ছোট শহরে গিয়ে অস্থায়ী কাজ নেন, কেউবা শ্রমিক হিসেবে দিন কাটান। এভাবে তাঁরা সমাজের নজরের বাইরে এক অদৃশ্য জগতে বেঁচে থাকেন। তবে এর মাশুলও কম নয়। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব, আর নিরাপত্তাহীনতা তাঁদের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে।
সামাজিক প্রতিফলন
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের এই প্রবণতা সমাজের ভেতরে চাপা পড়ে থাকা এক সমস্যাকে তুলে ধরে। অত্যধিক কাজের চাপ, ব্যর্থতার প্রতি সমাজের অসহিষ্ণু মনোভাব, আর লজ্জা এড়ানোর সংস্কৃতি মানুষকে ‘জোহাতসু’ হতে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি যতই হোক না কেন, মানসিক চাপ আর সামাজিক প্রত্যাশা এক ভয়াবহ আতঙ্ক হয়ে রয়ে গিয়েছে জাপানিদের জীবনে। জাপানে ‘জোহাতসু’ শুধু এক ব্যক্তিমানুষের হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং সমাজের চাপা যন্ত্রণা আর নিঃশব্দ প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
