বলিউডের ইতিহাসে ‘শোলে’ শুধু এক জনপ্রিয় ছবি নয়— এক কালজয়ী ছবি। এদিন ছবির ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রইল এই ছবির শুটিংয়ের কিছু অবিশ্বাস্য কিসসা।

 

স্বাধীনতা দিবস ১৯৭৫–এর বহু আগেই বলিউডের কালজয়ী ছবি শোলে–র ঢেউ এসে লেগেছিল নভি মুম্বইয়ের গ্রামেগঞ্জে। তখনও ক্যামেরা–অ্যাকশন মানে ছিল গ্রামের জন্য উৎসব। ৫০ বছর পরে, পানভেল–উরান রোডের ধারের সেই গ্রামগুলো আজ শহুরে কোলাহলে বদলে গেলেও, সেখানকার মানুষদের কাছে সেই দিনের স্মৃতি এখনো রঙিন, জীবন্ত।

 

সাতের দশকের গোড়ায়, এখানকার প্রধানত অগ্রী ও কোলি সম্প্রদায়ের মানুষ ধান চাষ ও মাছ ধরেই জীবন নির্বাহ করতেন। ১৯৭২ নাগাদ যখন 'শোলে'–র শুটিং শুরু হয়, গ্রামের মানুষ রোজই ছুটে যেতেন সেটে। অভিনেতা ধর্মেন্দ্র, ‘বীরু’ রূপে তখন স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গিয়ে খেতেন জাওলা শুকট (শুকনো চিংড়ি) আর তান্দুল ভাকরি (চালের রুটি) — কখনও নিজের বিরিয়ানি বদলে দিতেন গ্রামবাসীর খাবারের সঙ্গে।

 

শুধু নায়ক নয়, পুরো শুটিংয়ের সেট–ই তখন গ্রামীণ আতিথেয়তার স্বাদ পেয়েছিলেন। কেউ পানীয় দিতেন, কেউ ঘরে তৈরি মদ নিয়ে আসতেন। প্রবীণ হোটেল, ওল্ড পানভেল–এ থাকতেন ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমার, হেমা মালিনী, জয়া বচ্চনরা। হোটেলের পিছনে বানানো হয়েছিল ঘোড়াশালা।

 

পানভেল রেলস্টেশনের কাছেই শুট হয়েছিল সেই দৃশ্য — যেখানে ‘বসন্তী’ ঘোড়াগাড়িতে করে ‘জয়’ আর ‘বীরু’–কে নিয়ে যাচ্ছেন রামগড়ে। চিঞ্চপাড়া গ্রামের আমবাগানে ধারণ করা হয়েছিল বিখ্যাত “লগ গয়া নিশানা” দৃশ্য, যেখানে বীরু প্রেমের ফাঁদে বন্দুক চালানো শিখাচ্ছেন বসন্তীকে, আর জয় গাছতলায় শুয়ে তা দেখে মুচকি, মুচকি হাসছেন। আজ সেই আমবাগানের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক গ্যারেজ।

 

সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল গব্বরের ডাকাতদলের ট্রেন ডাকাতির দৃশ্য। পানভেল–উরান রেললাইনে, বামবাভি পাড়ার কাছে, ঘোড়সওয়ার ডাকাতদের ট্রেনের পিছনে ছোটা, গুলি বিনিময়, জয়–বীরুর সঙ্গে দুর্ধর্ষ লড়াই — সব শুট হয়েছিল সেখানেই। সেখানকার সেই করাতকল আজও চালু, যেখানে ‘সূরমা ভোপালি’ তার অতিরঞ্জিত কীর্তি শোনানোর দৃশ্য হয়েছিল।

 

বামবাভি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা জনার্দন নামা পাটিল এখনো চোখ বুজে মনে করতে পারেন সেই মুহূর্ত— ট্রেনের উপর জ্বলন্ত কয়লা ছোড়া, ঘোড়ার পিঠে ডাকাত তাড়া, ছোট্ট কাঠের ব্রিজে জয়–ডাকাতদের শেষ গুলি বিনিময়।

 

গ্রামবাসীর গলায় এখনও গর্ব — “আমাদের গ্রামগুলো এত সুন্দর ছিল যে পরিচালক–প্রযোজকেরা এখানে শুটিং করতেই আসতেন।” তবে সেই পাহাড়–টিলা, ঝর্ণা–জলাশয় এখন অতীত। সিডকোর প্রকল্পে গ্রাম বদলে গেছে, কিন্তু 'শোলে'–র স্মৃতি মুছে যায়নি।

 

শুধু শোলে নয়, এই পথের ধারের গ্রামগুলোতে হয়েছে নাস্তিক, 'ইয়াদোঁ কী বারাত', 'পাপী'–র মতো ছবির শুটিংও। তবু গ্রামের মানুষের চোখে 'শোলে'–র প্রভাব আলাদা — যেন আজও গব্বরের হুঙ্কার শোনা যায় বাতাসে।

 

“পঞ্চাশ বছর পরও কেউ যদি শুটিং–স্পট দেখতে আসে, সেটাই 'শোলে'–র আসল সাফল্য,” হাসতে হাসতে বললেন স্থানীয়রা। সিনেমা বদলেছে, সময় বদলেছে, কিন্তু গ্রামবাসীর কাছে শোলে রয়ে গেছে এক চিরন্তন আড্ডার বিষয়।