আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে উৎসব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকার অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন দেশের সেবায় অসাধারণ সাহসিকতার জন্য ন’জন ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) জওয়ানকে বীর চক্র সম্মান প্রদান করেছে। নতুন ভূমিকায়, পাকিস্তানের মুরিদকে ও ভাওয়ালপুরে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদর দপ্তর এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সামরিক ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো ফাইটার পাইলটসহ ন’জন ভারতীয় বায়ুসেনার বীর জওয়ানকে বীর চক্র প্রদান করা হয়েছে। বীর চক্রপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন, গ্রুপ ক্যাপ্টেন রঞ্জীত সিং সিধু, মনীশ অরোরা, অনিমেষ পাতনি, কুনাল কালরা।

রয়েছেন উইং কমান্ডার জয় চন্দ্র, স্কোয়াড্রন লিডার সার্থক কুমার, সিদ্ধান্ত সিং, রিজওয়ান মালিক এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অর্শবীর সিং ঠাকুর। ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান চলাকালীন কমপক্ষে ছ’টি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বীর চক্র হল যুদ্ধকালীন সাহসিকতার জন্য প্রদত্ত সামরিক পুরস্কার। যা সাধারণত পরম বীর চক্র ও মহা বীর চক্রের পর তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এই সম্মান দেওয়ার আগে, এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি.সিং জানান, অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত কমপক্ষে পাঁচটি পাকিস্তানি ফাইটার জেট ধ্বংস করেছে এবং একটি বড় বিমানও আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে। যা প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে আক্রমণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘যে বিমানটি ধ্বংস করা হয়েছে, এটি আমাদের জানা সর্বকালের সবচেয়ে বড় সারফেস-টু-এয়ার কিল’।

এয়ার চিফ মার্শাল অপারেশন সিঁদুরের সফল সমাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং আধুনিক সামরিক সংঘাতে এয়ার পাওয়ারের গুরুত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তায় তার প্রভাবের উপর গুরুত্বারোপ করেন। ভারত গত ৭ মে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। যা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার জবাব। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিল। অপারেশন চলাকালীন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি গুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। যার ফলশ্রুতিতে একশোরও বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পরে পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ প্রতিহত করে ভারত।

এদিন রাষ্টপ্রতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের নিরাপত্তার জন্য যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এটি মানবতার সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে’। স্বাধীনতা দিবসের আগে রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, ‘পহেলগাঁওয়ের হামলার পর গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যারা আমাদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তাদের জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে যোগ্য জবাব’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশ্ব এখন উপলব্ধি করেছে যে ভারত কখনও আগ্রাসী হবে না, কিন্তু নাগরিকদের রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষায় জবাব দিতে দ্বিধা করবে না’।

রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, অপারেশন সিঁদুর আসলে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক মাইলফলক। তাঁর কথায়, ‘এই অভিযানের ফলাফল প্রমাণ করেছে আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি’। প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরনি উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়। এই হামলায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গোটা ভারত। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন এই হামলায় দায় নিয়েও পরে অস্বীকার করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জবাবে ৭ মে ভারত অপারেশন সিঁদুর শুরু করে।