নিতাই দে, আগরতলা: এবার নেশার বিরুদ্ধে পথে নামলেন ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল। মাদকের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম— এই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে রবিবার বিকেলে আগরতলার সূর্যমণিনগরে অনুষ্ঠিত হল এক সচেতনতা মূলক বাইক র‍্যালি। এই নেশা বিরোধী র‍্যালির নেতৃত্ব দেন ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল নিজে। আয়োজিত এই বাইক র‍্যালিতে অংশ নেন বহু সরকারি কর্মী ও সাধারণ মানুষ। মাদকমুক্ত ত্রিপুরা গঠনের লক্ষ্যে এই ধরনের কর্মসূচি যে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়, সে কথাই জানান অংশগ্রহণকারীরা।

 

র‍্যালির সূচনা পূর্বে রামপ্রসাদ পাল এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, 'নেশা শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়। এটা গোটা সমাজের ক্ষয়িষ্ণুতা ডেকে আনছে। তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকে, দলমত নির্বিশেষে, একজোট হয়ে নেশার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে।' র‍্যালিটি শ্রীপালের বিধানসভা কেন্দ্র সূর্যমণিনগরের বিভিন্ন এলাকা পরিক্রম করে এবং পথচারীদের মাঝে মাদকবিরোধী প্রচার করা হয়। 

 

এদিন র‍্যালিতে এলাকার বিধায়ক তথা ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ নিজে স্কুটি চালিয়ে নেশার বিরুদ্ধে যুবসমাজকে সচেতন করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, 'জনপ্রতিনিধিরা যদি এভাবে মাঠে নেমে সচেতনতা গড়ে তোলেন, তাহলে যুব সমাজ অনেকটাই সঠিক দিশা পাবে।' এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুধু প্রশাসন নয়, সমাজের সব অংশের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এবং সেই পথেই এক সাহসী পদক্ষেপ আজ সূর্যমণিনগর থেকে শুরু হল। 

 

আরও পড়ুন: আজ ৭ জেলায় অতি ভারী বৃষ্টি, টানা সাতদিন প্রবল বর্ষণের থেকে নেই রেহাই, কোন কোন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি?

 

প্রসঙ্গত, গত মাসে আগরতলার উমাকান্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেশামুক্ত ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে মাদকের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা: মানিক সাহা এ কথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, মাদক ব্যবহারের সঙ্গে এইডস বিস্তারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে 'নো টু ড্রাগস' কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নেশামুক্ত ত্রিপুরা এবং এইডস মুক্ত ত্রিপুরা গড়তে অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নিজেরা সচেতন হয়ে, অন্যদেরকেও এবিষয়ে সচেতন করতে হবে। তবেই আমাদের এই ছোট রাজ্য ত্রিপুরা নেশার কবল থেকে দূরে থাকবে।' 

 

বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের মাদকের ব্যবহার ও এইডস সম্পর্কে সচেতন করে তোলার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন। অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানের অঙ্গ হিসেবে রাজ্যে ১৯৩৩ নম্বরের একটি হেল্পলাইন এবং কিউআর কোড খোলা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডি জি অনুরাগ বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মাদক বিরোধী অভিযানে বিশেষ সফলতা এসেছে। এছাড়া এবছর ৮.৫ লক্ষ গাঁজা গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। 

 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এন টি এফ-এর ত্রিপুরার প্রধান রমেশ রেড্ডি, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, নার্কোটিক্স কনট্রোল ব্যুরোর অতিরিক্ত অধিকর্তা প্রকাশ রঞ্জন মিশ্র, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার, পুলিশ সুপার ডা. কিরণ কুমার কে সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পতাকা নেড়ে মাদকের বিরুদ্ধে বাইক র‍্যালি ও পদযাত্রা এবং উমাকান্ত বিদ্যালয়ে একটি রক্তদান শিবিরের সূচনা করেন। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন এবং নার্কোটিক্স কনট্রোল ব্যুরোর আগরতলা জোনাল ইউনিটের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।