আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আমেরিকা এবং ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফের টানাপোড়েন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগী স্টিফেন মিলার রবিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভারতে রাশিয়ান তেল আমদানির তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ভারত এই তেল কিনে পরোক্ষভাবে রাশিয়ার যুদ্ধকে অর্থ জুগিয়েছে।
“ভারত যুদ্ধ অর্থায়ন করছে”
ফক্স নিউজ চ্যানেলের Sunday Morning Futures অনুষ্ঠানে মিলার বলেন, “ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কার্যত অর্থ পাঠাচ্ছে। ট্রাম্প একেবারে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
মিলারের দাবি, “চীনকে পাশে রেখে ভারত রুশ তেল কেনায় প্রায় সমানে চলে এসেছে। মানুষ জানলে অবাক হবে—ভারতের এই আমদানি ঠিক কতটা বিস্তৃত।”
‘তবু মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক দুর্দান্ত’
তবে ভারত-বিরোধী তীর ছুঁড়লেও, ট্রাম্পের মোদির সঙ্গে সম্পর্ককে ‘চমৎকার’ বলে ব্যাখ্যা করেন মিলার। তিনি বলেন, “দুই নেতার সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। তবে এতে রুশ তেল কেনার বাস্তবতা ঢাকা পড়ে না।”
ভারতের জবাব: তেল কেনা চলবে
ভারতীয় সরকারের সূত্রকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দিল্লি এখনই রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে না। কারণ, এই তেল ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তুলনামূলকভাবে সস্তা। যুদ্ধের আগে, ২০২১ সালে ভারতের মাত্র ৩% তেল আসত রাশিয়া থেকে। এখন সেই হার ৩৫%-৪০%-এ পৌঁছেছে।
ভারতীয় পণ্যে ২৫% শুল্ক বসালেন ট্রাম্প
এই ঘটনার পরদিনই, ৩০ জুলাই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন—ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক বসানো হবে। শুধু তাই নয়, তিনি হুঁশিয়ারি দেন—যেসব দেশ রাশিয়া থেকে তেল বা অস্ত্র কিনবে, তাদের ওপর শীঘ্রই কঠোর বাণিজ্যিক শাস্তি চাপানো হতে পারে। তাঁর বক্তব্য, “আমার কোনও আগ্রহ নেই ভারত কী করছে রাশিয়ার সঙ্গে। দুটোই মৃত অর্থনীতি। আমি শুধু বলছি, আমেরিকার স্বার্থে আমি শুল্ক বসাব।” তিনি আরও বলেন, যদি রাশিয়া শান্তিচুক্তিতে সম্মত না হয়, তাহলে যেসব দেশ তেল কিনছে, তাদের ওপর ১০০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে।
‘কৌশলগত মিত্র হলেও বিরক্তি আছে’: মার্কো রুবিও
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ মার্কো রুবিও বলেন, “ভারত আমাদের কৌশলগত মিত্র হলেও, তাদের রাশিয়ার সঙ্গে তেলের সম্পর্ক এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।”
বিশ্লেষণ: মিত্রতা না স্বার্থ—ভারতের সামনে কঠিন সময়
বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকা ও ভারত যেভাবে সামরিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, তাতে এই ধরনের প্রকাশ্য সমালোচনা অস্বস্তিকর। একইসঙ্গে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারতের ‘সংশ্লিষ্ট না থেকেও যুক্ত থাকা’ নীতির প্রভাব আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও বাড়তে পারে। এই মুহূর্তে রুশ তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোর মতো পরিস্থিতিতে নেই ভারত। অপরদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনও নতুন বাণিজ্য কৌশলের মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুকে নির্বাচনী অস্ত্র বানাচ্ছে। ফলে আগামী দিনে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যায়, তার ওপর নজর থাকবে বিশ্বের কূটনীতিক মহলের।
