আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের উপর শুল্ক চাপিছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানে যে তেলের ভাণ্ডার রয়েছে তার উন্নতিসাধনের জন্য দু'দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। কিন্তু ঘোষণার পরদিনই ট্রাম্পকে খোঁচা মেরেছেন বালোচ নেতা। তাঁর সাফ দাবি, পালোচ পাকিস্তান নয়। সুতরাং সেখানে তেল, গ্যাস-সহ প্রাকৃতিক সম্পদের যে ভাণ্ডার তা একান্তভাবেই বালোচদের। মির ইয়ার বালোচ নামের ওই নেতার এহেন উক্তি থেকে পরিষ্কার, আগামিদিনে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। ফলে আখেরে আমেরিকার উদ্দেশ্য কতটা সাধিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেল।
এক্স হ্যান্ডলে ‘বালোচ ইজ নট পাকিস্তান’ শীর্ষক এক বিবৃতি পেশ করেছেন মীর ইয়ার বালুচ। তাঁর সাফ কথা, বালোচিস্তান বিক্রি করা যাবে না। চিন-আমেরিকা তো বটেই, এমনকি বালোচ নাগরিকদের অনুমতি ছাড়া পাকিস্তানকে এখানে ধাতব খনিজের জন্য খনন করতে দেওয়া হবে না।"
সেই সঙ্গেই মীর ইয়ার বালুচ কাঠগড়ায় তুলছেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে। তাঁর দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে আমেরিকাকে ভুল বুঝিয়েছেন তিনি। তেল ও খনিজের পাক ভাণ্ডার সম্পর্কে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা রাজনৈতিক ও আর্থিক লাভের জন্য বেলুচিস্তানের সম্পদ আত্মসাৎ করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা। ট্রাম্পকে সাবধান করে দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, এই চুক্তি একেবারেই ভুল কৌশল। এতে আইএসআই আরও বেশি করে শক্তিশালী হবে। ফলে পৃথিবীজুড়ে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়বে।
জুনে ট্রাম্প-মুনির বৈঠক
২০২৫ সালের জুনে, জেনারেল আসিম মুনির এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে একটি হাই-প্রোফাইল মধ্যাহ্নভোজ বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে, তাঁরা বালোচিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গিয়েছিল।
বালোচিস্তান প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বলে পরিচিত। এখন মনে হচ্ছে আমেরিকা এই অঞ্চলে আগ্রহী। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত খনিজ সম্পদের সম্ভাব্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছে। আলোচনার সময়, একজন আইনপ্রণেতাকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, জেনারেল মুনির বালোচিস্তানের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন।
বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে, কারণ বালোচিস্তানের নেতারা পাকিস্তান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এমন সব সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টার অভিযোগ করছেন- যা তাদের নয়, এবং এই চুক্তিকে ঘিরে গুরুতর রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে।
মীর ইয়ার বালুচ জেনারেল মুনিরকে ট্রাম্পকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ করেছেন-
বেলুচিস্তানের নেতা মীর ইয়ার বালুচ জেনারেল আসিম মুনির এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানে তেলের মজুদের উপস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কর্মকর্তাদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছেন, "পাকিস্তানের কোনও তেলের মজুদ নেই। জেনারেল মুনির আপনাকে মিথ্যা দাবি দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন। বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ কেবল বালোচিস্তানের জনগণের।"
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে- বেলুচিস্তান বিক্রির জন্য নয়। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেছেন যে, বেলুচিস্তানের জমি বা খনিজ কোনটিই বালোচ জনগণের স্পষ্ট সম্মতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। তিনি স্থানীয়দের অধিকার উপেক্ষা করে এমন চুক্তি না করার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান- উভয়কেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- বিহারের ভোটার তালিকায় থেকে বাদ খোদ বিরোধী দলনেতার নাম! চাঞ্চল্যকর দাবি তেজস্বী যাদবের
মীর ইয়ার বালোচ একটি পোস্টে লিখেছেন, "পাকিস্তানের উগ্র সেনাবাহিনীকে বালোচিস্তানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর অনুমতি দেওয়া একটি গুরুতর কৌশলগত ভুল হবে। এই ধরনের প্রবেশাধিকার আইএসআই-এর কর্মক্ষম এবং আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি করবে, যার ফলে এটি তার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে, জঙ্গিদের নিয়োগ করতে এবং সম্ভবত আবার ৯/১১-এর মতো বড় হামলার পরিকল্পনা করতে পারবে।"
মীর ইয়ার- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মহলকে সত্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং তাদের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বালোচ জনগণের স্বাধীনতা এবং ন্যায্য মালিকানাকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
