আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে সরকারিভাবে ইলন মাস্কের স্টারলিঙ্ক তাদের ব্যবসা করার অনুমতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ইতিমধ্যেই এবিষয়ে সমস্ত তথ্য সামনে এনেছেন। ভারতের ইন্টারনেটের বাজারে স্টারলিঙ্ক যে অতি সহজে ব্যবসা করতে পারনে সেকথাও স্পষ্ট হয়েছে। 


দেশে খুব শীঘ্রই মিলবে ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবা। ইতিমধ্যেই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছে সংস্থাটি। স্টারলিঙ্কের আগমনে দেশের টেলিকম সেক্টরে একটি বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনুমান করছিলেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। কিন্তু, স্থানীয় টেলিকম অপারেটরগুলির জন্য এটি খুব শীঘ্রই কোনও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা কম। সম্প্রতি এমনই ইঙ্গিত মিলেছে।


ইলন মাস্কের স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাটি ভারতে মাত্র ২০ লক্ষ কনেকশনের সুবিধা প্রদান করতে পারবে। কেন্দ্রের তরফে সংস্থাটিকে এই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মূলত স্পেকট্রাম ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে স্টারলিঙ্ককে এই নির্দেশ দিয়েছে কোম্পানিটি। ফলে, স্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের জন্য ইলন মাস্কের সংস্থাটি তাৎক্ষণিকভাবে কোনও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবিষয়ে আরও জানিয়েছেন যে, কোম্পানিটি সম্ভবত মাসিক কনজিউমার ব্রডব্যান্ড প্ল্যানের মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের পরিষেবা প্রদান করতে চলেছে। এই মাসিক প্ল্যানের খরচ আনুমানিকভাবে ৩০০০  টাকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই খরচের পরিমাণ জিও এয়ারটেল এবং বিএসএনএলের মতো স্থানীয় কোম্পানিগুলির তরফে অফার করা প্ল্যানের অনেক বেশি। তবে, উন্নত পরিষেবার কারণে এটি গ্রাহকদের একটি বড় অংশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। যদিও, এটির গতির ক্ষেত্রেও সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।


টেলিকমিউনিকেশোন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, “ভারতে স্টারলিঙ্কের মাত্র ২০ লক্ষ গ্রাহক থাকতে পারে। সংস্থাটি ইউজারদের ২০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতি অফার করতে পারবে। এটির কারণে দেশের স্থানীয় ও বর্তমান টেলিকম পরিষেবার উপর কোনও প্রভাব পড়বে না।


তবে, আরও একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হল বিশ্বব্যাপী মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের এই সংস্থাটির মোট গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৫০ লক্ষের কাছাকাছি। যদি এটি ভারতে গ্রাহক সংখ্যায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়ে ওঠে, তাহলেও এটি কোম্পানিটির জন্য একটি বড় সাফল্য হবে। ভারতের গ্রাহক সংখ্যাটিও কোম্পানিটির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।


ব্র্যান্ডের লঞ্চ কৌশলের অংশ হিসেবে, প্রতিটি ডিভাইস কেনার সঙ্গে এক মাসের বিনামূল্যে ট্রায়াল পিরিয়ড অফার করার পরিকল্পনা রয়েছে স্টারলিঙ্কের। এর ফলে গ্রাহকদের নিয়মিত মাসিক পেমেন্ট শুরু করার আগে পরিষেবাটি পরখ করে দেখার সুযোগ করে দেবে। মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিলায়েন্স জিও যখন ভারতে টেলিকম পরিষেবা দেওয়া শুরু করে, তখন সংস্থার তরফ থেকে শুধু সিম ক্রয় করার জন্য ৯৯ টাকা করে ধার্য করা হয়েছিল। বহুদিন বিনামূল্যে কল এবং হাইস্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা উপভোগ করেছিলেন গ্রাহকরা। এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই জিও বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর। মাস্কও কি সেই পথই অবলম্বন করবেন। মনে তো হচ্ছে তা-ই।

আরও পড়ুন: প্রতারিত বহু চাকরিপ্রার্থী যুবক, খোওয়া গেল লক্ষ লক্ষ টাকা, দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দিরের নিরাপত্তার নামে টাকা আদায়!


সংস্থাটি ভারতীয় বাজারের জন্য তার প্ল্যানও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। স্টারলিঙ্কের সংযোগ নিতে প্রয়োজনীয় স্যাটেলাইট ডিশ ডিভাইসের দাম আনুমানিক ৩৩ হাজার টাকা নির্ধারণ কর হয়েছে। এএনআই জানিয়েছে, মাসিক আনলিমিটেড ডেটা প্ল্যানের জন্য গ্রাহকদের তিন হাজার টাকা খরচ করতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


বর্তমানে বিশ্বে ১০০টির বেশি দেশে পরিষেবা প্রদান করছে স্টারলিঙ্ক। ভারতের প্রতিবেশী দেশ ভুটানও স্টারলিঙ্কের পরিষেবা নিয়ে থাকে। বাংলাদেশে স্টারলিঙ্ক ডিভাইসের দাম ৩৩ হাজার টাকা। ভূটানেও খরচ একই, কিন্তু সেখানে দুই রকমের প্ল্যান রয়েছে স্টারলিঙ্কের। রেসিডেন্সিয়াল লাইট প্ল্যান- প্রতি মাসে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০০১ টাকা। এই প্ল্যানে ২৩ এমবিপিএস থেকে ১০০ এমবিপিএস পর্যন্ত স্পিডের ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়। স্টান্ডার্ড রেসিডেন্সিয়াল প্ল্যান- প্রতি মাসে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪২০১ টাকা। এই প্ল্যানে ২৫ এমবিপিএস থেকে ১১০ এমবিপিএস পর্যন্ত স্পিডের ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়। এই প্ল্যানে অনলাইন গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও কল করা যায় কোনও বাধা ছাড়াই।