আমাদের হাতের কাছে এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা শুধু শরীর নয়, মনেরও খেয়াল রাখে। তাই তো ওষুধ ছাড়াও যুগ যুগ ধরে ঘরোয়া টোটকার উপরও ভরসা রাখেন অনেকে। বহু ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ তুলসী পাতা তেমনই একটি উপাদান। ভারতে তুলসী পাতা খাওয়ার চল বহু পুরনো। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলছে, রোজ তুলসী পাতা খেলে কোনও মরশুমি রোগ ছুঁতে পারে না। নানা অসুখবিসুখে তো বটেই, তুলসী পাতা মন ভাল রাখতেও সাহায্য করে। এমনকী কোনও ওষুধ কিংবা থেরাপি ছাড়া মানসিক চাপও কমিয়ে দিতে পারে এই পাতা। গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই অবিশ্বাস্য তথ্য। 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসী পাতা মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে কর্টিসলের মাত্রা ৩৬% কমাতে পারে! আর এই কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়লেই মানসিক চাপ, উদ্বেগ বাড়তে থাকে। আসলে কর্টিসল হল অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপাদিত একটি হরমোন যা সাধারণত 'স্ট্রেস হরমোন' নামে পরিচিত। এটি শরীরে মানসিক চাপের কারণেই নিঃসৃত হয়। দীর্ঘদিন উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার কারণে যদি কর্টিসলের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, অটোইমিউন রোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া বিশেষ করে মুখ এবং পেটে মেদ জমা, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, অনিদ্রা, ক্লান্তি, চুল পড়া, ব্রেন ফগ, মাথাব্যথা এবং আরও অনেক স্বাস্থ্য কিছুর ঝুঁকি বাড়ে। আর শরীরে এই কর্টিসলের মাত্রাই চটজলদি কমিয়ে দিতে পারে তুলসী। 

আরও পড়ুনঃ বাড়বে না ওজন, জব্দ হবে ব্লাড সুগারের দাপাদাপি! সকালে সবচেয়ে সহজলভ্য এই ফলই খেলেই ডায়াবেটিসের খেলা শেষ

মানসিক চাপ কমাতে ঠিক কীভাবে কাজ করে তুলসী পাতা? আসলে তুলসী একটি অভিযোজিত ভেষজ। যার মধ্যে ইউজেনল, ক্যাম্ফেইন, সিনেওল, ক্যাম্ফরের মতো এমন কয়েকটি উপাদান যেমন যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। সেই কারণে তুলসী পাতা মাইগ্রেনের সমস্যাও কমাতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।

কর্টিসলের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খান। যা বেশি খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে তুলসীপাতা খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। গবেষকদের দাবি, কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই তুলসী পাতা শরীরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং অত্যধিক উত্তেজনাও কমায়। গবেষণা দেখা গিয়েছে, তুলসীপাতা খাওয়ার ৪০ মিনিটের মধ্যে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা কমে। এমনকি ৮ সপ্তাহ পর শরীরে কর্টিসল হরমোন ক্ষরণের মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। শরীর-মন থাকে চনমনে। 

আরও পড়ুনঃ মানুষের কঠিন সমস্যার সমাধান করে চ্যাটজিপিটি! একদিনের জন্য সে মানুষ হলে কী করত? উত্তর শুনলে চোখ ভিজবে আপনারও

তুলসী পাতার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে। তাই রোজ তুলসী পাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হজম ক্ষমতা বাড়ে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে ও প্রদাহ কমাতে এই ভেষজ খুবই কার্যকর। তুলসী চিবিয়ে খাওয়া ছাড়াও রস কিংবা জলে ফুটিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।