আজকাল ওয়েবডেস্ক: অন্ধ্র প্রদেশের আলোচিত মদ কেলেঙ্কারিতে নতুন মোড়—তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদের উপকণ্ঠে একটি ফার্মহাউসে অভিযান চালিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) উদ্ধার করল প্রায় ১১ কোটি টাকা নগদ। তদন্তকারীদের দাবি, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি (ওয়াইএসআরসিপি)-র শাসনকালে ঘটে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এই অভিযান পরিচালিত হয় অভিযুক্ত নম্বর ৪০ হিসাবে তালিকাভুক্ত বরুণ পুরুশোথমের জবানবন্দির ভিত্তিতে। তদন্তকারীদের কাছে বরুণ যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে এই অর্থের প্রবাহ এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ নেতাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে SIT তার তদন্ত আরও জোরদার করেছে এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। শীঘ্রই আরও বড় কিছু নাম অভিযুক্তের তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছে। ওয়াইএসআরসিপি দাবি করেছে, এ যাবত যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে—যেমন সাংসদ পি ভি মিধুন রেড্ডি, প্রাক্তন বিধায়ক চেভিরেড্ডি ভাস্কর রেড্ডি, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার কে ধনুঞ্জয় রেড্ডি, বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার কৃষ্ণমোহন রেড্ডি প্রমুখ—তাঁরা কেউই রাজ্যের মদ নীতি বা আবগারি দপ্তরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। ওয়াইএসআরসিপি-র সাংসদ ও নেতা ওয়াই ভি সুব্বা রেড্ডি বলেন, “এই নেতারা রাজ্যের মদ নীতিতে কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।” তিনি আরও বলেন, “SIT এখন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। এটি ন্যায়বিচার নয়, নিছক নিপীড়ন। এমনকি আদালত পর্যন্ত এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করছে।”

আরও পড়ুন: অন্ধ্রে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে!

প্রসঙ্গত, এই কেলেঙ্কারিকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে চাপানউতোর চরমে পৌঁছেছে। শাসক তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র বিরুদ্ধে বিরোধীরা যেখানে তদন্ত ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তুলছে, সেখানে সরকার পক্ষ বলছে—আইন আইনের পথেই চলবে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সূত্রের দাবি, SIT আগামী দিনে আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান চালাতে পারে। ২০২৫ সালের ১৮ই জুন, অন্ধ্র প্রদেশের গুণ্টুর জেলায় রেন্টাপল্লা গ্রামে চলা একটি রাজনৈতিক সফরে অংশ নিতে গিয়ে, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও YSRCP প্রধান জগন মোহন রেড্ডি এর গাড়ি একটি জনসাধারণের ওপর দিয়ে চলে যায়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি—চার্লি সিংগাইয়া নামে একটি দলীয় কর্মী—গাড়ির নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত ঘোষণা হয়। পুলিশের তদন্তে ভিডিও, সৈনিক নজরদারি ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রেড্ডিকে এবং তাঁর কনভয়ের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অবহেলা সংক্রান্ত অভিযোগ (culpable homicide) আনা হয়  ।

এই ঘটনায় ২৩ জুন পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে FIR দাখিল করা হয়, যেখানে রেড্ডি ও তাঁর চালককে অভিযুক্ত করা হয়  । এর পর ২২ জুন তথাকথিত ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, তবে YSRCP দাবি করে এটিকে “ডক্টরড ভিডিও” বলা অযৌক্তিক  । ২৭ জুন, অন্ধ্র প্রদেশ উচ্চ আদালত (HC) মামলার তদন্ত ও পুলিশি কার্যক্রম দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে এবং রেড্ডি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার নির্দেশ দেয়  । ৩ জুলাই আদালতের একটি বিবৃতিতে বিচারক কেরাম করিয়া, “কুম্ভ মেলা’র মতো ভিড়পূর্ণ আচারেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে” বলে উল্লেখ করে রেড্ডির পক্ষে সাময়িক ত্রাণ জারি করেন  । একই সঙ্গে, রেড্ডি নিজেও উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাঁর নাম ভুলভাবে আসামি করা হয়েছে। ওই আবেদনপত্রে নিহত কর্মীর পরিবারকে দেওয়া সামান্য ক্ষতিপূরণ উল্লেখ করে রেড্ডি নির্দোষ দাবি করেন।

এই ঘটনার পাশাপাশি, জগন মোহন রেড্ডি দায়িত্বশীল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি সমালোচনা করেছেন বর্তমান চন্দ্রবাবু নাইডু নেতৃত্বাধীন TDP সরকারকে, দাবি করেছেন যে তারা রাজ্যের দালানভাবে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিয়েছে—মাত্র এক বছরে ১,৭৫,১১২ কোটি টাকা ঋণ গ্রহন করেছে এবং নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি । এছাড়া তিনি অভিযোগ করেছেন যে, তেলেগু দেশম পার্টি আমরাবতিতে অত্যাধিক ব্যয় করছে—প্রতি বর্গফুট ৯,০০০ টাকা খরচ করছে যা একটি “ক্যাশ কাউ” প্রকল্পের মতো চলে যাচ্ছে । রাজনৈতিকভাবে, এই ঘটনায় তীব্র উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে। YSRCP সরকার অভিযোগ করছে যে, TDP রাজনৈতিক হেনস্থা ও “ভুল মামলা” ফাইলিংয়ের মাধ্যমে বিরোধিদের নিপচ্ছন্দ করছে  । হামলা ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে জগন আগামীদিনে আদালতে রায় সংশোধনের আশা করছেন। আদালতের পরবর্তী শুনানি প্রায় এক সপ্তাহ পর নির্ধারিত আছে।