আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় ফুটবলের এক চলমান ইতিহাস। বিশেষ করে মোহনবাগানের। নাম নয়, নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান। বিদেশি নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর প্রতিপক্ষের ঘর থেকে তুলে আনেন চিমা ওকেরিকে। দলবদলের বাজারে প্রতিপক্ষের ঘর ভেঙেছেন অনেকবার। একপ্রকার হাইজ্যাক করে সৌরভ গাঙ্গুলিকে মোহনবাগানে নিয়ে আসেন। সফল উদ্যোগপতির পাশাপাশি মোহনবাগানের কান্ডারী। তার সময়কালে তিনটে জাতীয় লিগ এসেছে। স্পনসরহীন সময় নিজেই ক্লাব চালান। দুটো আই লিগ এসেছে। এসেছে আইএসএলও। মঙ্গলবার মোহনবাগান দিবসে 'মোহনবাগান রত্ন' দেওয়া হয় স্বপনসাধন বসু, ওরফে টুটু বসুকে। তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন দেবাশিস দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু। ছিলেন তিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, স্নেহাশিস চক্রবর্তী। এছাড়াও ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, অভিষেক ডালমিয়া, বাবুল সুপ্রিয়, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি সহ কর্মসমিতির সদস্যরা। 

 

এমন একটি দিনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন 'মোহনবাগান রত্ন।' ভাগ করে নেন অনেক স্মৃতি। টুটু বসু বলেন, 'সৌরভকে যখন আমি তুলেছিলাম, ওর বাবা আমার নামে এফআইআর করেছিল। ওর মা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, আমার ছেলে মোহনবাগানে খেলবে। যখন শুনলাম আমাকে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে, আপনার কেমন লাগছে? বলেছিলাম, যাদের জন্য রত্ন পেয়েছি, তাঁদের স্টেডিয়ামে গিয়ে বলব। ছোটবেলায় শুনেছিলাম চাঁদ পাওয়ার গল্প, আমি আজ মনে করছি হাতে চাঁদ পেয়েছি। ইতিহাসে কেন টুটু দার নাম লেখা থাকে আমি বলে দেব। টাকা অনেকে খরচ করতে পারে। মোহনবাগান সভ্যদের ভোটাধিকার ছিল না। তাঁরা ভোট দিতে পারত না। আমি সচিব হওয়ার পর আশ্চর্য হলাম যে ক্লাবের সদস্যদের ভোটের অধিকার নেই। আমরা কোর্টে গেলাম। আমাদের হয়ে কোনও উকিল দাঁড়াল না। আমি কালো কোট পরে গিয়ে বললাম, এই ক্লাবের মেম্বারদের ভোটের অধিকার নেই। পোস্টাল ব্যালটে ভোট হয়। ভারতীয় নাগরিকরা যেমন ভোট দেয়, তেমন হোক। বললাম ৮০০০ সদস্যদের ছবি নিয়ে জমা দেব। চিফ জাস্টিসের ঘরে ছবি জমা দিলাম। ঐতিহাসিক নির্বাচন হাইকোর্ট দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল এবং হাইকোর্টেই হয়েছিল। আমি সচিব হয়েছিলাম। টুটু বসু মেম্বারদের ভোটের অধিকার দিয়েছিল।'

 

মোহনবাগানের ক্যান্টিন নিজের নামে করার অনুরোধ জানান টুটু বসু।  তিনি বলেন, 'আমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমি খাদ্যরসিক। ক্যান্টিন ৩০ লাখ টাকা দিয়ে করে দিয়েছিলাম। আমরা স্টু পাউরুটি খেয়ে উদ্বোধন করেছিলাম। আমি মারা গেলে ক্যান্টিন আমার নামে করে দিও।' ঐতিহাসিক দিনে ফেরান প্রথম বিদেশি সই করার স্মৃতি। একইসঙ্গে তুলে ধরেন ক্লাব কর্পোরেট সংস্থাকে তুলে দেওয়ার গল্প। টুটু বসু বলেন, 'আইনে ছিল বিদেশি প্লেয়ার খেলাতে পারবে না। আমি সেই কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। বলেছিলাম যা হওয়ার হবে। চিমা তখন সবে বিয়ে করেছে। ওর সঙ্গে কথা বলতে যাই। টাকা পয়সার বিষয়ে স্ত্রী ক্যাথির সঙ্গে কথা বলতে বলে। সে তখন রান্না করছিল। রান্না ঘরে গিয়ে কথা বলি। সবসময় ক্লাবের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। যখন বুঝলাম আমার ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন বন্ধু সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে বললাম দায়িত্ব নিতে। আগের বছর দুটো ট্রফি দিয়েছে।' 

 

মোহনবাগান দিবসে এসে আগামী বছর কন্যাশ্রী কাপে সবুজ মেরুনের মেয়েদের দল খেলানোর দাবি জানান ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এছাড়াও মোহনবাগান ট্রফি জিতলে, সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবে আনার কথা আর্জি জানান। অরূপ বিশ্বাস বলেন, 'গর্বের দিন। ইংরেজদের চোখে চোখ রেখে অদম্য সাহস নিয়ে মোহনবাগান প্রথম  শিখিয়েছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাফল্য পাওয়া যায়। স্বপন সাধন বসু মোহনবাগানের ভীত গড়ে দিয়েছে। মোহনবাগান রত্ন তাঁকে কী দেওয়া হবে? তিনিই তো প্রতিষ্ঠান। টুটু দা-অঞ্জন দার মানিকজোর জুটির কথা শুনছিলাম। আগামী দিনে দেবাশিস দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু যেন ওদের মতো হয়। আগামী দিনে কন্যাশ্রী কাপে মোহনবাগানের মেয়েদের দেখতে চাই। মোহনবাগান ট্রফি জিতলে সেটা যেন তিনদিন পরে না আসে, যেন সঙ্গে সঙ্গেই ক্লাবে আসে।' এর উত্তরে ফুটে ওঠে প্রবাদপ্রতিম প্রশাসকের হাস্যরস। টুটু বসু বলেন, 'প্রেম করলেই কি সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে হয়? এবার তো ট্রফি এসেছিল, একটু পরে হলেও। আমার বিশ্বাস,  মানিকজোড় জুটি‌ করবে। মোহনবাগান ক্লাব যাতে হাত দেয়, সোনা হয়ে যায়।' 

আরও পড়ুন : খাস কলকাতায় সমকামী অ্যাপ থেকে প্রতারণার ছক, পুলিশের জালে তিন

 

টুটু বসুকে মোহনবাগান রত্ন দেওয়া প্রসঙ্গে সুজিত বসু বলেন, '১৯১১ সালের দিনটা সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে চলছে মোহনবাগান। আমি একসময় ৬০ পয়সা, এক টাকায় খেলা দেখা লোক। টুটু দা যে সম্মান পাচ্ছে সেটা আমাদের জন্য গৌরবের।' এদিন ১৯ জনকে মোহনবাগানের লাইফ মেম্বার করা হয়। ২০ নম্বর স্থানে নিজের নামের আগাম বুকিং করে রাখলেন 'মোহনবাগান রত্ন।' 


টুটু বসু বলেন, 'বয়স বাড়ছে। কতদিন আর আপনাদের মধ্যে থাকব জানি না। এক লক্ষ টাকার সঙ্গে চার লক্ষ টাকার চেক মোহনবাগান ক্লাবে পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরের বছর আমাকে ২০তম লাইফ মেম্বার করার অনুরোধ।' এমন ঐতিহাসিক দিনে 
ছোটবেলার বন্ধু অঞ্জন মিত্র এবং স্ত্রীকে মিস করেন মোহনবাগান রত্ন।