আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতে কি প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেন? ঘুম ভেঙে ধড়ফড় করে ওঠে বুক? সাবধান! বিষয়টিকে আর হালকা ভাবে নেবেন না। কারণ, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দুঃস্বপ্নই জীবনে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। এমনকি, হতে পারে অকালমৃত্যুর কারণও।
ব্রিটেনের ডিমেনশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক সাম্প্রতিক গবেষণা এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে। গবেষকদের দাবি, যাঁরা প্রতি সপ্তাহে দুঃস্বপ্ন দেখেন, তাঁদের ৭০ বছর বয়সের আগে মারা যাওয়ার আশঙ্কা, অন্যদের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। ইউরোপিয়ান অ্যাকাডেমি অফ নিউরোলজি কংগ্রেস ২০২৫-এ উপস্থাপিত এই গবেষণাপত্রটিতে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রায় আড়াই হাজার শিশুর উপর চালানো সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
আয়ু কমায় দুঃস্বপ্ন?
কিন্তু দুঃস্বপ্নের সঙ্গে আয়ু কমার সম্পর্ক কোথায়? গবেষণার প্রধান, ডঃ আবিডেমি ওটাইকু জানিয়েছেন, দুঃস্বপ্ন আসলে শরীরের উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি করে। মস্তিষ্ক যেহেতু স্বপ্ন ও বাস্তবের ফারাক বোঝে না, তাই দুঃস্বপ্নের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শরীরে ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ পরিস্থিতি তৈরি করে। এর জেরে ঘাম দেওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয়।
এই প্রক্রিয়া চলাকালীন শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এই হরমোনটিই কোষীয় স্তরে বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। বিশেষজ্ঞরা আরও দেখেছেন, নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখা ব্যক্তিদের টেলোমেয়ারের (ক্রোমোজোমের সুরক্ষাকবচ) দৈর্ঘ্য দ্রুত কমে আসে, যা দ্রুত বার্ধক্যের অন্যতম জৈবিক লক্ষণ।
ওটাইকুর মতে, বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই মানসিক চাপ এবং ঘুমের ব্যাঘাতই অকাল বার্ধক্য ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলার মূল কারিগর। বস্তুত, স্থূলতা, ধূমপান বা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মতো চিরাচরিত ঝুঁকির থেকেও দুঃস্বপ্নকে অকালমৃত্যুর জন্য বেশি দায়ী কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
এই প্রভাব বয়স, লিঙ্গ, জাতি বা মানসিক স্বাস্থ্য নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই সত্যি। এমনকি মাসে এক বার দুঃস্বপ্ন দেখাও স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সমীক্ষা চলাকালীন যে ২২৭ জনের অকালমৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি ছিল। সুতরাং, দুঃস্বপ্নকে আর নিছক স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার দিন শেষ, মত বিশেষজ্ঞদের।