আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'অপারেশন সিঁদুর'-এর পর থেকেই বড় বড় বুলি আওরাচ্ছিলেন পাক মন্ত্রী, কূটনীতিকরা। জোড়াল হয়েছিল পরমাণু অস্ত্র যুদ্ধের সম্ভাবনা। কিন্তু সেসব যে আদতে ফাঁকা আওয়াজ তা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যত স্বীকার করে নিলেন। উল্টে আমতা আমতা গলায় পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য।
ইসলামাবাদের শনিবার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। সেখানে এক দল পড়ুয়ার সামনে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাত প্রসঙ্গে ওঠে। আলোচনা হয় পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়েও। ওই অনুষ্ঠানেই পড়ুয়ারা পাক প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন কেরছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে কি পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের পরিকল্পনা ছিল?। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, "পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্ত ভাবেই শান্তির জন্য। দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থে। আগ্রাসনের জন্য নয়।"
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। জহ্গিদের গুলিতে নিহত হন ২৬ জন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায়, ভারত 'অপারেশন সিদুঁর' অভিযান চালায়। পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে জঙ্গি কাঠামো লক্ষ্য করে একটি বড় সামরিক আক্রমণ করে ভারতীয় সেনা। ৭ই মে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী নয়'টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। যার মধ্যে ছিল জৈশ-ই-মোহাম্মদ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি বাহাওয়ালপুরের পরিকাঠামোও।
এদিনের আলোচনায় সেই হামলার বিষয় উঠলে প্রধানমন্ত্রী শরিফ স্বীকার করে নেন যে, ভারতের আক্রমণে সে দেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ভাঙলেও প্রকাশ্যে মচকাচে নারাজ শাহবাজ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, "পূর্ণ শক্তির সঙ্গে সেই হামলার মোকাবিলা করেছে পাক সেনা, পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।" শরিফ নিশ্চিত করেছেন যে, ভারতীয় হামলার সময় ৫৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ: আপনার কাছে কি এই চার গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে? তাহলেই...
ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতির পর পাকিস্তানে ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বের খবর ছড়ায়। শোনা যায় যে, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে। বদলে ক্ষমতার সর্বেসর্বা হবেন পাক সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসীম মুনির। তাঁর নজর প্রেসিডেন্ট পদের দিকে। তবে, সেই খবর 'ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। পাক প্রধানমন্ত্রী 'দ্য নিউজ'কে একটি পৃথক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "ফিল্ড মার্শাল আসীম মুনির কখনও প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাননি এবং এই ধরণের কোনও পরিকল্পনা বিবেচনাতেও নেই"।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। তারপর গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে সেনা অভিযান চালায় ভারত। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতের হামলায় গুঁড়িয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি।
এরপর টানা চার দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সশস্ত্র সংঘাত চলেছে। ১০ মে সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় ভারত এবং পাকিস্তান। দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়ায় এই সংঘাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ভারত-পাক সংঘাত পরমাণু শক্তি প্রয়োগের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও বার বার এই দাবি করেছিলেন।
সেই দাবি ঘিরেই দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং সামরিক তৎপরতা বাড়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিকস্তরেও উদ্বেগ বেড়েয়েছিল।
তবে,শরিফের এ দিনের মন্তব্যগুলি জনসাধারণকে আশ্বস্ত করার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে সংযত থাকার ইঙ্গিত দেওয়ার লক্ষ্যে বলে মনে করা হচ্ছে।
