আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ইরানে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইজরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের সময়, তেহরান কেবল তার সামরিক ঘাঁটি এবং মানুষই হারায়নি, প্রকাশ্যে এসেছে সেদেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলিও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর, মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি তার বিমান বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে আরও আধুনিক করার জন্য মরিয়া। এর জন্য, তারা চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে খবর। একটি নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ব্যবস্থা, বিশেষ করে চেংডু জে-১০সি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। যুদ্ধবিমানটি শত্রুর প্রতিরক্ষা দফারফা করতে পারে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কী বলেছে?
গ্লোবাল টাইমসে এক সাক্ষাৎকারে, চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র জিয়াং বিন বলেছেন যে, চীন বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত নানা দিক ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। এর ফলে, চীন আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তিতে গঠনমূলক অবদান রাখতে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইরানের জন্য চীনের জে-১০সি জেট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
যখন ইজরায়েল এবং আমেরিকা ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে বিমান হামলা শুরু করে, তখন ইরান তাদের বিমান বাহিনীর জেটও উড়াতে পারেনি। হামলার সময় তাদের পুরনো সোভিয়েত যুগের জেটগুলি অকেজো হয়ে পড়ে।

বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ সম্প্রতি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বেজিংয়ে গিয়েছিলেন। সেই সফরের সময় তিনি জে-১০সি যুদ্ধবিমানের সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

জে-১০সি কতটা বিপজ্জনক?
জে-১০সি 'ভিগোরোয়াস ড্রাগন' হল চীনে তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের বহুমুখী যুদ্ধবিমান। এটি অত্যাধুনিক AESA রাডার, ডিজিটাল ককপিট এবং হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লের মতো উচ্চ প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য দিয়ে সজ্জিত।

এটি আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমি এবং জাহাজ-বিরোধী মিশনে সক্ষম এবং পিএল-১৫ এর মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হতে পারে।

জে-১০সি এর সর্বোচ্চ গতি প্রায় Mach 2 এবং মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর গোপন বৈশিষ্ট্য এবং উচ্চ-কার্যক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিনের কারণে এটি রাফালে এবং F-16 এর মতো যুদ্ধবিমানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম।  এই কারণেই পাকিস্তানের পরে ইরানও এটি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জে-১০সি যুদ্ধবিমান:

পুরোপুরিভাবে জে-১০ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে চীনের প্রায় আড়াই দশক সময় লেগেছিল। এটি এমন একটি প্রাণঘাতী যুদ্ধবিমান, যা আকাশযুদ্ধে যেমন সক্ষম, তেমনি স্থলভাগে আঘাত হানার ক্ষেত্রেও সমান দক্ষ। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকের মাঝামাঝি (২০০৪-২০০৬) যুদ্ধবিমানটি চালু করা হয় এবং ২০১৮ সালে এটি যুদ্ধ খাতে যুক্ত হয়।

আপাতত জে-১০সি যুদ্ধবিমান চীন ছাড়াও রয়েছে তাদের বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে। জে-১০ সিরিজের তৃতীয় ও সর্বশেষ সংস্করণ হল জে-১০সি যুদ্ধবিমান।

জে-১০ তৈরি করা হয়েছিল পুরোনো হয়ে যাওয়া জে-৭ যুদ্ধবিমান প্রতিস্থাপন করার জন্য। উন্নত প্রযুক্তির অভাবজনিত গুরুতর কারিগরি চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে চীন তাদের মহাকাশশিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করে। অন্য দেশগুলোর বিমান নকল না করে তাদের কাছ থেকে কৌশলে শিখতে থাকে, যার পরিনাম জে-১০ যুদ্ধবিমান।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক মন্দার সুযোগে বেজিং মস্কোর উন্নত ব্যবস্থা কিনে নেয়, যা জে-১০–এর সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল

তুলনামূলক কম দামের চীনের জে-১০সি এখন রাফালের উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে? এর জবাব এখনও কোনও সামরিক বিশেষজ্ঞই বাল করে দিতে পারেননি।