১৯৯৩ সালে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস সম্পূর্ণ রূপে বদলে যায়। হিরো-ভিলেনের তথাকথিত সম্পর্ক পাল্টে যায়। পর্দার তরুণ ক্ষিপ্ত নায়ক (শাহরুখ খান) তাঁর বন্ধুর বাবার প্রতি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে ওঠেন। তিনি রাস্তার গুন্ডা নন, স্যুট পরিহিত খলনায়ক। যাঁর চোখ জুড়ে খালি নিষ্ঠুরতা। চরিত্রের নাম ছিল মদন চোপড়া।
2
11
তাঁর অহংকার, বিশ্বাসঘাতকতার ফলে পতন বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে ওঠে। আর যে মানুষটি মদন চোপড়াকে অমর করে রেখেছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি দলিপ তাহিল। পুরো নাম দলীপ ঘনশ্যাম তাহিল রামানি।
3
11
৩০ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় জন্ম দলীপের। নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ। নিয়তির অন্য পরিকল্পনা ছিল। বাজিগরে মদন চোপড়ার ভূমিকা কেবল খলনায়কের আদর্শকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেননি, বরং নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কর্পোরেট খলনায়ক হিসেবে নিজের মাটি শক্ত করেছিলেন দলীপ।
4
11
তাঁর বাবা ঘনশ্যাম তাহিল রামানি ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানচালক ছিলেন। এর ফলে তাঁর কখনওই এক শহরে বেশি দিন থাকা হয়নি। ছোটবেলার অনেকটা কেটেছে লখনউয়ে। তাঁর বাবা চাইতেন দলীপও বড় হয়ে বিমানচালক হবেন। কিন্তু দলীপের ইচ্ছে ছিল অন্য।
5
11
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। থিয়েটার ব্যক্তিত্ব অ্যালেক এবং পার্ল পদ্মশ্রীর তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রতিভা আরও বিকশিত হয়।
6
11
১৯৭৪ সালের শ্যাম বেনেগালের অঙ্কুর ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ। ছোট চরিত্র সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিল। এর পরের ছ’বছর সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখেননি। নানা বিজ্ঞাপন করে দিনযাপন করেছিলেন। কিন্তু থিয়েটারকে ভুলে যাননি কখনওই। ধৈর্য্যের ফল পান তিনি। ১৯৮০ সালে রমেশ সিপ্পির শান ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরে ১৯৮২ সালে অস্কারজয়ী গান্ধী ছবিতে অভিনয় করেন। আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
7
11
যদিও প্রথম দিকের ছবিগুলিতে তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কয়ামত সে কয়ামত তক (১৯৮৮)-এ তাঁর অভিনয়ের পরিধি বিস্তৃত হয়। জুহি চাওলার বাবা ধনরাজ সিং হিসেবে তিনি একজন শক্তিশালী চরিত্র অভিনেতা হিসেবে সম্মান অর্জন করেছিলেন।
8
11
নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে, তিনি টেলিভিশনেও একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে রমেশ সিপ্পির বুনিয়াদ এবং সঞ্জয় খানের দ্য সোর্ড অফ টিপু সুলতানে অভিনয় করে। ১৯৯৩ সালে বাজিগরে নিষ্ঠুর খলনায়ক মদন চোপড়ার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি হিন্দি ছবিতে খলনায়কের ধাঁচ বদলে দেন।
9
11
শহুরে খলনায়ক কেমন হতে পারেন তাঁর আদর্শ হয়ে ওঠেন তিনি। এর পরবর্তী এক দশকে বহু ছবিতে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সময় তিনি ডর, ইশক, জুড়ওয়া, রাম লখন এবং কাহো না প্যার হ্যাঁ-র মতো ছবিতে কাজ করেন।
10
11
তাঁর ঝুলিতে ১০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করা অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৩ সালে বলিউডের গণ্ডি ছাড়িয়ে হলিউডে পা রাখেন তিনি। বিবিসি-র টেলিভিশন সিরিজে ইস্টএন্ডারে কাজ করেন বহুদিন। এছাড়াও বিবিসি-র মিনি সিরিজ নিউক্লিয়ার সিক্রেটস-এ তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয় বিদেশেও।
11
11
দেশে ফিরে নানা কঠিন চরিত্রে অভিনয় করতে থাকেন তিনি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০১৩ সালে ভাগ মিলখা ভাগ ছবিতে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলা। অভিষেকের কয়েক দশক পরেও, দলীপ তাহিল থিয়েটারের মঞ্চ এবং টিভির পর্দায় সমানভাবে সক্রিয় রয়েছেন।