আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুরু হয়ে গিয়েছে কাউন্টডাউন। এই শহরে লিওনেল মেসির দ্বিতীয়বার পা রাখার মাহেন্দ্রক্ষণ এগিয়ে আসছে। আর সেই ক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে, ততই পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে শহর কলকাতায়। শুক্রবার গভীর রাত থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে মেসিপক্ষ।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন হবে মেসি-ময়। বাঙালির বড় আপন, বড় প্রিয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হবে গোট কনসার্ট। সেখানে প্রীতি ম্যাচ খেলবে মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের অল স্টার দল। প্রীতি ম্যাচের বল গড়ানোর আগে ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির হাতে মোহনবাগানের তরফ থেকে তুলে দেওয়া হবে ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের বিশেষ জার্সি। প্রাক্তন ফুটবলাররা উপস্থিত থাকবেন অনুষ্ঠানে। বিশ্ববন্দিত আর্জেন্টাইনের হাতে এই উপহার তুলে দেবেন মোহনবাগানের সচিব সৃঞ্জয় বোস ও সভাপতি দেবাশিস দত্ত। সেই সময়ে কি থাকবেন অমর একাদশের পরিবারের সদস্যরা?
১৯১১ সালের ২৯ জুলাই ইস্ট ইয়র্কশায়ার ক্লাবকে মাটি ধরিয়ে মোহনবাগান আইএফএ শিল্ড জিতেছিল। ব্রিটিশ সূর্যও যে অস্ত যেতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছিল মোহনবাগানের দুর্দান্ত এগারো জন। মোহনবাগানের অদিনায়ক ছিলেন শিবদাস ভাদুরী। ফাইনালে মোহনবাগান ২-১ গোলে হারিয়েছিল ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে। সবুজ-মেরুনের হয়ে গোল দু'টি করেছিলেন শিবদাস ও অভিলাষ ঘোষ। বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সেদিন লড়েছিল খালি পা। যা ভারতীয় ফুটবলের মহাকাব্যের পাতায় গৌরবজনক এক অধ্যায় হিসেবে লেখা রয়েছে।
সূত্রের খবর, ঐতিহাসিক ১৯১১-র সবুজ-মেরুন জার্সির আদলে তৈরি হচ্ছে বিশেষ জার্সি। সেই উপহারই তুলে দেওয়া হবে মেসির হাতে।
অমর একাদশের জার্সি দেওয়া হবে মেসিকে। সেই প্রসঙ্গে শিবদাস ভাদুড়ীর প্রপৌত্রী দেবিকা ভাদুড়ী আজকাল ডট ইন-কে বলছেন, ''১৯১১-র জার্সি যে মেসির হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা আমার জানা ছিল না। ভারতবর্ষে ফুটবল খুবই জনপ্রিয়। কলকাতা তো ফুটবলের মক্কা হিসেবে পরিচিতই ছিল। সেই দিক থেকে ১৯১১-র শিল্ড জয় ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসে কোহিনূরের মতোই জ্বলজ্বল করছে। মেসিও এই পুরস্কার পেয়ে খুশিই হবেন। দেশের ফুটবল ইতিহাস জানতে পারবেন তিনি। আমি শিবদাস ভাদুড়ীর প্রপৌত্রী। মোহনবাগান অন্ত প্রাণ এক বাঙালি হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করছি।''
অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের প্রথম টিকিট ফিফা তুলে দিয়েছিল দেবিকা ভাদুড়ী ও তাঁর মায়ের হাতে। মেসিকে যখন এই বিশেষ জার্সি তুলে দেওয়া হবে, তখন কি যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে থাকবেন দেবিকা দেবী? তিনি বলছেন, ''মেসির হাতে যখন জার্সি তুলে দেওয়া হবে, সেই সময়ে অমর একাদশের উত্তরসূরিরা উপস্থিত থাকলে ভাল হত। এটা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক জায়গা। শিহরণ জাগানোর মতো এক ঘটনা। সেই দিক থেকে বলতে পারি আমাদের না জানানো হলে তা আমাদের কাছে দুঃখের। জার্সি যখন দেওয়া হবে, তখন মেসি যদি জানতে পারে, অমর একাদশের পরিবারের সদস্যরা সেখানে রয়েছে, তাহলে তাঁরও ভাল লাগবে।''
অমর একাদশের আরেক সদস্য ছিলেন মনমোহন মুখোপাধ্যায়। তাঁর নাতি নিখল মুখোপাধ্যায়ও আজকাল ডট ইন-কে জানালেন, এ বিষয়ে তাঁরা বিন্দুবিসর্গ জানেন না। নিখিলবাবু বলছেন, ''এ দারুণ গর্বের ব্যাপার। উই আর নট অ্যাট অল ইনভাইটেড। আমাদের জানানো উচিত ছিল। দেখি ক্লাবে জিজ্ঞাসা করব।'' নিখিলবাবুর পুত্র তথা মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ''সর্বকালের অন্যতম সেরা এক ফুটবলারের হাতে যে ১৯১১-র শিল্ড জয়ের জার্সি দেওয়া হবে, এটা জানতাম না। শুধু জার্সি নয়, সেই গৌরবজনক অধ্যায়ের লিখিত ইতিহাসটাও মেসিকে দেওয়া উচিত।''
১৯১১-র শিল্ড জয়ের সেই জার্সি কেবল পোশাক নয়। এই জার্সিই কখনও দেশ। কখনও একবুক আবেগ। কখনও ইতিহাস। যা তুলে দেওয়া হবে বিশ্বফুটবলের রাজপুত্রের হাতে।
