আজকাল ওয়েবডেস্ক: সৌরভ ও দ্রাবিড়ের শুরু। ডিকি বার্ডের শেষ। দুই ভারতীয় মহাতারকার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন এই মহাজীবন। প্রথমবার টেস্টে আম্পায়ারিং করেছিলেন ১৯৭৩ সালে। সেটা ছিল তাঁর হোম গ্রাউন্ড হেডিংলি।
শেষ টেস্ট ১৯৯৬। লর্ডস। যে লর্ডসে লেখা ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক রূপকথা। লর্ডসেই টেস্ট অভিষেক ভারতীয় ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির। সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়। কিংবদন্তি আম্পায়ারের সেটাই ছিল শেষ টেস্ট। ডিকি বার্ড মানেই নানা গল্প। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আসার কথা শুনে পাঁচ ঘণ্টা আগেই মাঠে হাজির তিনি। আবার সেই তিনিই বলেছিলেন, ''আমার বিয়ে হয়েছে ক্রিকেটের সঙ্গে! শুধু সংসারটাই করছি না। আমি খুব ভাল একজন বাবা হতে পারতাম।''
কাট টু সৌরভ-মাখা লর্ডসের সেই ঐতিহাসিক টেস্ট। জাভাগল শ্রীনাথের বলে এলবিডব্লিউ হলেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মাইক আথারটন। কোনও রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করে ডিকি বার্ড আঙুল তুলে দিলেন। আথারটনকে বললেন, ''সরি মেট, ইট ওয়্যার প্লাম্ব।''
আরও পড়ুন: ডিআরএস বা প্রযুক্তি তাঁর লাগত না, খালি চোখেই নিতেন সিদ্ধান্ত, সেই ডিকি বার্ড আর নেই ...
অভিষেক টেস্টে সৌরভ করেছিলেন ১৩১ রান। সৌরভের বিরুদ্ধে ক্যাচের আবেদন করেছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। ডিকি বার্ড দেখেছিলেন বল সৌরভের কাঁধে লেগেছে। ডিকি বার্ড ছিলেন বাজ পাখি। তিনি ইংরেজ ক্রিকেটারদের সেই আবেদনে কর্ণপাত করেননি। রাহুল দ্রাবিড়ও ৯৫ রান করেছিলেন লর্ডসে। ডিকি বার্ডের টেস্ট জীবনের শেষ সিদ্ধান্তের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছেন সৌরভ। মহারাজের বলেই এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন জ্যাক রাসেল। সেটাই ছিল ডিকি বার্ডের শেষ টেস্ট সিদ্ধান্ত।
সেই লর্ডস টেস্ট ছিল ডিকি বার্ডের কেরিয়ারের ৬৬-তম টেস্ট। সেই সময়ে তা ছিল বিশ্বরেকর্ড। ইংল্যান্ডে ৫৪টি টেস্টে আম্পায়ার ছিলেন তিনি।
ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পেশাদার ক্লাব ফুটবল বেশদিনি খেলতে পারেননি। চোটের লাল চোখ দেখতে হয়েছিল তাঁকে। ফুটবলকে বিদায় জানিয়ে ক্রিকেট আম্পায়ার হয়ে যান ডিকি বার্ড। ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুর দিকে জেফ্রি বয়কটের সঙ্গে একই দলে খেলতেন। ক্রিকেটার হিসেবে কিংবদন্তি না হলেও ক্রিকেট ইতিহাসে ডিকি বার্ড অমর হয়ে গেলেন আম্পায়ার হিসেবে।
শ্রমিক বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন হ্যারল্ড ডেনিস বার্ড। কিন্তু স্কুল জীবনে তার ডাক নাম হয়ে যায় ‘ডিকি’। সেই থেকে তিনি সবার প্রিয় ডিকি বার্ড। দুটি কারণে আম্পায়ার হিসেবে খ্যাতি ছিল তাঁর। খারাপ আবহাওয়ার কারণে খেলা বন্ধ করে দিতেন। ব্যাটসম্যানদের এলবিডব্লিউ দিতেন না বললেই চলে। এলবিডব্লিউ আউট দিলেও সেটা ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। তাঁর দৃষ্টি ছিল প্রখর। অবসর জীবনে আত্মজীবনী লিখে আম্পায়ারিংয়ের মতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বার্ড। ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ এক মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছিল। কিংবদন্তি ডিকি বার্ডের জীবনের দৌড় থেমে গেল ৯২ বছর বয়সে। মৃত্যু এসে আঙুল তুলে বলে গেল, 'ইউ আর প্লাম্ব।' ক্রিকেটবিশ্ব শোকাহত কিংবদন্তির প্রয়াণে।
আরও পড়ুন: বারবার যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ইশারা করেছেন রউফ, উত্তাল নেটদুনিয়া...
