আজকাল ওয়েবডেস্ক: বল পায়ে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে ওঠেন লিওনেল মেসি।
অথচ লিও মেসি যুবভারতী ছাড়ার পরে সেখানে তাণ্ডবলীলা। চলল ভাঙচুর। স্টেডিয়ামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।
যে বিশ্ববন্দিত ফুটবলার সৃষ্টিশীল ফুটবলের জন্য বিখ্যাত, সেই বিখ্যাত ফুটবলারের কলকাতা সফর ধ্বংসের ছবি এঁকে দিয়ে গেল।
মেসির প্রথম ভারত সফরে কলকাতা দেখেছিল তাঁর ফুটবল দক্ষতা। ম্যাচের একমাত্র গোল হয়েছিল তাঁরই কর্নারে। আর্জেন্টিনা বনাম ভেনিজুয়েলা ম্যাচ ছিল দেশের জার্সিতে এলএম ১০-এর অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচ।
এবারের ভারত সফরে মেসি খেলবেন না, এটা আগে জানাই ছিল। কিন্তু যে গুলো মেসি করবেন, সেই প্রতিশ্রুতিগুলোই কি রক্ষা করা গেল? মেসির চারপাশে অসংখ্য মানুষ পরিবৃত হয়েছিলেন। চলছিল দেদার ছবি তোলা। সেই সব মানুষরা মেসির চারপাশে কেন বলয় তৈরি করতে গেলেন? ভাল করে বোঝাই গেল না মেসিকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি পল। তাঁদেরও ভাল করে বোঝা গেল না।
রাজপুত্র নির্দিষ্ট সময় না থেকে আগেই যুবভারতী ছেড়ে চলে যান। তার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন উপস্থিত দর্শকরা। যে স্টেডিয়াম গান ধরেছিল মেসির, ট্যাঙ্গোর সঙ্গে রবীন্দ্র গানের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছিল, তারই শেষ পরিণতি মোটেও সুরেলা হল না। বিতর্ক, গ্রেপ্তার, অরাজকতার ছবি তুলে ধরল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেসির কলকাতা-সফর।
গ্যালারি থেকে উড়ে এল জলের বোতল। মেসি মাঠ ছেড়ে চলে যেতেই উন্মত্ত হয়ে ওঠেন দর্শকরা। তাঁরা গ্যালারি ভাঙচুর করতে শুরু করে দেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় স্টেডিয়ামের।
মোহনবাগান অলস্টার বনাম ডায়মন্ড অলস্টার ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে প্রবেশ করেন মেসি। সেই ম্যাচও পুরো সময় হল না। মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেন মেসি। তখন থেকেই শুরু হয়ে গেল ব্যাপক বিশৃঙ্খলা।
কথা ছিল, মেসি পেনাল্টি মারবেন। কোথায় কী! আয়োজকদের তরফ থেকে প্রতিশ্রতি ছিল মেসি উঠতি ফুটবলারদের সঙ্গে ক্লিনিক করবেন। সেও তো হল না। শাহরুখ খানকেও দেখা গেল না যুবভারতীতে।
ভক্ত-সমর্থকদের সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেল। চলল উন্মাদের মতো ধ্বংসলীলা। আন্তর্জাতিক মানের এই স্টেডিয়ামের ক্ষতিপূরণ কে দেবে এবার? দেশের বিখ্যাত এক স্টেডিয়াম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। মাত্র পনেরো মিনিট মেসি মাঠে ছিলেন। অনেক খেলায় ওই পনেরো মিনিটেই এলএম ১০ প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ফালাফালা করে দেন। অথচ শনিবার ওই পনেরো মিনিট ধ্বংসের বীজ বুনে গেল। তিনি চলে যেতেই দৃশ্যপট বদলে গেল। সুন্দর-সাজানো ছবিটাও গেল বদলে।
শহর কলকাতার জন্যও কি ভাল বিজ্ঞাপন হল? বিদেশের মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে লেখালেখি। মুখ পুড়ল এই শহরের।
অতীতে বহু বিখ্যাত ফুটবলারের পায়ের ধুলো পড়েছে এই কলকাতায়। ফুটবল সম্রাট পেলে, দিয়েগো মারাদোনা, অলিভার কান...। তাঁদের কলকাতা সফরে এত বিশৃঙ্খলা আগে কখনও হয়নি। এত বিতর্কও হয়নি। কলকাতার উগ্র-উন্মত্ত রূপও দেখেনি গোটা বিশ্ব।
মেসির কলকাতা সফর উঠতি ফুটবলারদের জন্যও কি ভাল দৃষ্টান্ত হয়ে ধরা দিল? যে বল পায়ে তিনি বিখ্যাত, এদিন তাঁর পায়ে ছিল না বল। কেবল হাত নাড়লেন, হাসলেন, ভিড় শরীরে নিয়ে একটু হাঁটলেন।
বন্যেরা বনে সুন্দর, মেসি ফুটবল মাঠে। তাঁর খেলা দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবলমাঠ ভরে যায়। তাঁর নাটমেগ, থ্রু বল, গোলের গন্ধ মাখা পাস দর্শকের বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরায়। এক সাররিয়ালিস্ট জগতে নিয়ে যায় ভক্তদের।
এই শহর ফুটবল না দেখে মেসির হাঁটা, হাত নাড়ানো দেখার জন্যই হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছিল। আজও কোনও কোনও সংসার চার হাজার টাকায় চলে। সেই টাকা জলে গেল।
সব অর্থেই এই মেসি-শহর ক্ষতির। পকেটের টাকা খসল। এই দেশের ফুটবল র্যাঙ্কিং ক্রমশ পড়তির দিকে। সেই পরিকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হল। মেসির ক্লাসে উঠতি ফুটবলাররা খেলার টিপস পেতেন। সেটাও হল না। এই মেসি-সফর তা হলে কীসের জন্য? নিজের পকেট ভরানোই ছিল মোক্ষ উদ্যোক্তার।
তাই যে বিশ্ববন্দিত ফুটবলার বল পায়ে সৃষ্টি করেন অসংখ্য দুর্ধর্ষ মুহূর্ত, মনে রাখার মতো কিছু ফ্রেম তৈরি করে যান ভাবীকালের জন্য, সেই ফুটবলারের ভারত সফর ধ্বংসের প্রতীক হয়েই থেকে গেল। মেসির উজ্জ্বল ফুটবল কেরিয়ারে দ্বিতীয়বারের কলকাতা সফর কলঙ্কজনক হয়েই থেকে গেল। এটাই যা খারাপ লাগার।
