আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইউনাইটেডকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ওঠার পর সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মোহনবাগান ফুটবলারদের। ম্যাচের পর বেশ কিছুক্ষণ স্টেডিয়ামে আটকে থাকেন হোসে মোলিনা সহ ফুটবলাররা। কলকাতায় কোচিংজীবনে এমন একটি বিকেল এর আগে দেখেননি বাগান কোচ। ভাঙচুর হয় দিমিত্রি পেত্রাতোসের গাড়ি। হয় লাঠিচার্জও। পরপর দুই ম্যাচ জেতা সত্ত্বেও গ্যালারি থেকে উড়ে আসে ধিক্কার। শিল্ডের গ্রুপ লিগের ম্যাচ বয়কট করে মোহনবাগান সমর্থকরা। মাত্র কয়েক শো সমর্থক ছিল গ্যালারিতে। শনিবাসরীয় সন্ধেয় ডার্বিতে এমন পরিস্থিতি চান না মোলিনা। ৯০ মিনিটের জন্য নিজেদের অবস্থান ভুলে দলকে সমর্থন করার অনুরোধ জানান বাগানে জোড়া ট্রফি জয়ী কোচ।
মোলিনা বলেন, 'সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে চাই, পরিস্থিতি ভুলে অন্তত ৯০ মিনিট দলকে সমর্থন করুন। তারপর আবার নিজেদের অবস্থানে বহাল থাকুন। ফ্যানরা যা করছে, সেটা ঠিক না। জানি ওরা খুশি নয়। আমি সেটা বুঝি। আমরা এএফসি খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্লেয়াররা যেতে চায়নি। আমার কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জিততে হবে। তাহলে ফ্যানরা খুশি হবে। আমরা ট্রফি জিততে চাই। আমি চাই সমর্থকরা মাঠে এসে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করুক। সবসময় ফ্যানরা গুরুত্বপূর্ণ। ডার্বিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিশ্চিত ইস্টবেঙ্গল ফ্যানরা ওদের সমর্থন করতে গ্যালারি ভরাবে। আমরা এবার সাপোর্টারদের ১০০ শতাংশ সমর্থন পাইনি। এটা আমাদের পরিস্থিতি আরও কঠিন করবে। ফ্যানদের মাঠে আসতে অনুরোধ করব। আমাদের কলকাতা ডার্বি জিততে সাহায্য করুন।' এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ খেলতে ইরানে না যাওয়া নিয়ে সরগরম ময়দান। ক্ষিপ্ত সবুজ মেরুন সমর্থকরা। কিন্তু তাঁদের অবস্থান এবং যাবতীয় পরিস্থিতি ভুলে একজোট হয়ে শিল্ড ফাইনালে ডার্বি লড়াইয়ে সামিল হওয়ার বার্তা মোলিনার।
গত কয়েক বছরের ডার্বিতে খাতায়-কলমে অনেকটাই এগিয়ে থেকে শুরু করে মোহনবাগান। কিন্তু এবার দুই প্রধান প্রায় সমানে সমানে। জাপানি স্ট্রাইকার হিরোশি ইবুকির অন্তর্ভুক্তি লাল হলুদের স্ট্রাইকিং ফোর্সকে আরও শক্তিশালী করেছে। অচেনা স্ট্রাইকার। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। এরিয়াল বলে ভাল। কিন্তু জাপানিকে নিয়ে ভাবিত নয় সবুজ মেরুন শিবির। বাগানের দুই দীর্ঘকায় চেহারার ডিফেন্ডার অ্যালবার্তো রডরিগেজ এবং টম অ্যালড্রেড থাকবে তাঁকে সামলানোর জন্য। হিরোশি প্রসঙ্গে মোলিনা বলেন, 'ম্যাচটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। হিরোশির খেলা আমরা দেখিনি। আমরা ওকে চিনি না। তাতে সমস্যা কোথায়? তবে জানি ও ভাল প্লেয়ার।' তাঁর দলের অন্যতম ভরসা রবসন বিপক্ষের কোচ অস্কার ব্রুজোর কোচিংয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন। ব্রাজিলীয়কে হাতের তালুর মতো চেনেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। তারওপর রয়েছে রবসনের এককালীন সতীর্থ মিগুয়েল। আইএফএ শিল্ড ফাইনাল দেখবে একদা দুই বন্ধুর লড়াই। এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, 'রবসন আমাদের দ্বিতীয় স্ট্রাইকার বা উইঙ্গার। মিগুয়েল মাঝমাঠে খেলে। আমি ব্যক্তি বিশেষে ভাবতে পছন্দ করি না। এটা মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ। আমাদের দল হিসেবে ওদের হারাতে হবে। আমি জানি ওরা একে অপরকে চেনে। রবসন অস্কারের কোচিংয়ে খেলেছে। এরকম ফুটবলে হয়েই থাকে। এটা ওদের জন্য স্পেশাল হতে পারে, আমার জন্য নয়।'
মরশুমের প্রথম ডার্বি মাত্র ১০ দিনের প্রস্তুতিতে খেলতে হয়েছিল। এবার প্রায় আড়াই মাসের অনুশীলনে। আগের থেকে পরিস্থিতি ভাল হলেও এটা আদর্শ নয় বলেই মনে করেন মোলিনা। চলতি মরশুমে এখনও পর্যন্ত হাতেগোনা ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগানের সিনিয়র দল। ডুরান্ড কাপের তিনটে ম্যাচ, এএফসির একটা এবং শিল্ডের দুটো। ম্যাচ ফিটনেসের জন্য ম্যাচের সংখ্যা আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ। শিল্ড ডার্বিতে সম্ভবত মনবীর সিংকে পাওয়া যাবে না। তেমনই ইঙ্গিত বাগান কোচের। চলতি মরশুমে ডার্বিতে ০-২ এ পিছিয়ে মোহনবাগান। কলকাতা লিগের পর ডুরান্ড কাপেও অস্কারের ইস্টবেঙ্গলের কাছে হার। সেই আফশোস এখনও পুরোপুরি যায়নি। আরও একটা ডার্বির প্রাক্কালে মোলিনা জানালেন, সেই ম্যাচটা তাঁদের জেতা উচিত ছিল। গতবারের লিগ শিল্ড এবং আইএসএল কাপ জয়ীদের কাছে এবার অগ্নিপরীক্ষা। ডার্বি হারের হ্যাটট্রিক রুখে আরও একবার নিজেদের ভারতসেরা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ।
