আজকাল ওয়েবডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মহিলা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জেমিমা রদ্রিগেজের ঐতিহাসিক ১২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসই বদলে দিয়েছিল খেলার গতিপথ।

সেই ইনিংসই ভারতীয় দলকে বিশ্বাস জুগিয়েছিল অসম্ভবও সম্ভব। হরমনপ্রীত কৌর নেতৃত্বাধীন দল শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে মহিলা বিশ্বকাপ জেতে।

তবে আজ যাঁকে গোটা দেশ নায়িকা হিসেবে দেখছে, মাত্র এক বছর আগেও তাঁর জীবন ছিল বিতর্কের ঘূর্ণিপাকে। ২০২৪ সালে জেমিমার ক্লাব খার জিমখানা তাঁর সদস্যপদ বাতিল করেছিল।

কারণ হিসেবে জানানো হয়, তাঁর বাবা ইভান রদ্রিগেজ ক্লাবের প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া ধর্মীয় সভা আয়োজন করেছিলেন।

কী ঘটেছিল সেই সময়ে? বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর খার জিমখানার বার্ষিক সাধারণ সভায়।

সেই বৈঠকে জিমখানার কয়েকজন সদস্য অভিযোগ তোলেন যে, প্রেসিডেন্টিয়াল হলে একাধিক ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ক্লাবের নিয়ম লঙ্ঘনের সমান।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেমিমার বাবা ১৮ মাসে প্রায় ৩৫টি সভা আয়োজন করেছিলেন। সদস্যদের অভিযোগ ছিল, এই সভাগুলির সঙ্গে ধর্মান্তর কার্যকলাপ যুক্ত ছিল, যা ক্লাবের সংবিধানের পরিপন্থী।

অভিযোগ ওঠে, এই সভাগুলিতে নাচ, গান হত, বড় পর্দায় ভিডিও চলত পুরো ব্যাপারটা অনেকটা আধ্যাত্মিক সমাবেশের মতো ছিল।

ক্লাবেরই এক কর্মচারী প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গাডেকরকে এই আয়োজন সম্পর্কে জানান। পরবর্তীতে এই ঘটনার ভিত্তিতে জেমিমার সদস্যপদ বাতিলের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেমিমা এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, যখন ঘটনাটা ঘটেছিল, নিজের সম্পর্কে যা বলা হচ্ছিল তা সহ্য করা যেত, কিন্তু যখন বাবা-মাকে টেনে আনা হল, সেটা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। আমরা সবকিছু নিয়ম মেনে করেছিলাম, তার প্রমাণও ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন ছিল এবং মানসিকভাবে আমাদের ভীষণভাবে আঘাত করেছিল।’

তিনি আরও জানান, ‘ঘটনাটা ঘটেছিল দুবাই বিশ্বকাপের পর, যেখানে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। আমি নিজেও নিজের পারফরম্যান্সে হতাশ ছিলাম। তার পর হঠাৎ করে দেখলাম আমার এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা খবর, ব্যাপক ট্রোলিং। তখন মনে হয়েছিল, একের পর এক আঘাত আসছে। প্রথমে ব্যর্থতা, তারপর মিথ্যে অভিযোগ। ভাই ফোন করতে কান্না থামাতে পারিনি।’

অভিযোগ ওঠার পর ইভান রদ্রিগেজ গত বছরই পরিষ্কার করেছিলেন, খার জিমখানায় যে প্রার্থনা সভাগুলি আয়োজিত হয়েছিল, তা সম্পূর্ণভাবে নিয়ম মেনে এবং ক্লাব কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে করা হয়েছিল।

তিনি জানান, ‘মিডিয়ায় যে ভুল খবরগুলি প্রচারিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরিষ্কার জানাতে চাই যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে এক বছর ধরে প্রার্থনা সভা ক্লাবের নিয়ম মেনে করা হয়েছিল’।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, সেই ঘটনার ঠিক এক বছর পর ২০২৫ সালে আবারও জেমিমা সংবাদ শিরোনামে। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে।

নভি মুম্বাইয়ের ডি.ওয়াই. পাটিল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে তিনি জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন।

তারপর ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ১১৬ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস ভারতকে ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দেয়।

তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। এই ইনিংস কেবল ভারতকে ফাইনালে তোলেনি, বরং অতীতের বিতর্কের মধ্যেও তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ও প্রতিকূলতার মুখে লড়াই করার ক্ষমতার প্রতীক হয়ে ওঠে।