আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর পদ বাতিল করা হয়েছে। মুকুল কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক ছিলেন। তাঁর পদ খারিজ হওয়ায় আসনটি খালি হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মহম্মদ রাশিদির বেঞ্চ রায়টি দেয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের আবেদনের ভিত্তিতে বেঞ্চ মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজ করে দেয়। ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও হাইকোর্ট ‘দলবিরোধী’ কার্যকলাপের অভিযোগে একজন বিধায়কের পদ খারিজ করল। এছাড়াও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান হিসেবে মুকুলকে নিয়োগের স্পিকারের সিদ্ধান্তকেও ত্রুটিপূর্ণ বলে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মুকুল। নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হওয়ার পর তিনি বিজেপি ছেড়ে দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। ফলে তৃণমূলের মুকুল খাতায় কলমে বিজেপির বিধায়কই ছিলেন। বিজেপি বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জিকে এই বিষয়ে অভিযোগ জানায়। তিনি জানিয়ে দেন, মুকুল বিজেপিরই বিধায়ক। তাঁর পদ খারিজ করা যাবে না। এমনকি তাঁকে এমনকি, তাঁকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানও করা হয়েছিল।
স্পিকার বলেন, “আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে, এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। আদালতের আদেশটি দেখতে হবে এবং তারপরে কী করণীয় তা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের কিছু সুরক্ষা আছে, দেখা যাক সেখানে কী আছে।”
২০২১ সালে বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় পিএসি চেয়ারম্যান পদে কেন মুকুল থাকবেন তা নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁর দাবি, ওই পদে বিরোধী দলের সদস্যকে বসানো হয়। ২০২৩ সালে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগবিরোধী আইনে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন শুভেন্দু। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতা হাই কোর্টে। এই দু’টি মামলার রায় ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার। রায়ে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজ করা হয়েছে।
রায়ের পর শুভেন্দু বলেন, “সংবিধানের জয় হয়েছে। দশম তফসিলের জয় হয়েছে। আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি। বিমান ব্যানার্জির নেতৃত্বে ১৫ বছর কেটে গিয়েছে যেখানে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। এর আগে সিপিএম এবং কংগ্রেস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা লড়তে পারেনি। ২০২১ সাল থেকে বিজেপিকে নিশানা করা হচ্ছে। একের পর এক, বিজেপি বিধায়কদের বিভিন্নভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আজ এটা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে সংবিধানই শেষ কথা বলে।”
তিনি আরও আরও জানান যে তিনি এখন অন্যান্য দলত্যাগীদের বিরুদ্ধেও মামলা করবেন। শুভেন্দু বলেন, “যদি কেউ দল ত্যাগ করতে চান, তাহলে তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত। আমি নিজে বিজেপিতে যোগদানের আগে আমার মন্ত্রিত্ব এবং পদ ছেড়ে দিয়েছিলাম।”
তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী শুভেন্দুকে আক্রমণ বলেন, “শিশির অধিকারী সাংসদ হওয়ার পর, আমি তাঁকে বিজেপির সভায় যেতে, অমিত শাহের পা ছুঁতে এবং দলীয় হুইপ প্রত্যাখ্যান করার সময় ভোটে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি। তখন শুভেন্দুর সংবিধানের জয় কোথায় ছিল? মুকুলদা গুরুতর অসুস্থ। আমি তাঁর আরোগ্য কামনা করি। কিন্তু প্রতারণার সঙ্গে জড়িত শুভেন্দু বড় বড় কথা বলছেন। বিজেপি কীভাবে মহারাষ্ট্র, গোয়া এবং অরুণাচলের সরকার ভেঙে দিয়েছে তার উত্তর তাঁকে দিতে বলুন।”
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী এই রায়কে স্বাগত জানালেও স্পিকারকে তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই রায় সংবিধানের জয় এবং দলত্যাগবিরোধী আইন রক্ষার পদক্ষেপ। স্পিকার এটি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু শুভেন্দুর কথা তাঁর সঙ্গে খাপ খায় না। তাঁর নিজের দল তৃণমূল থেকে নেতাদের বিজেপিতে আনার উৎসাহ দেয়। তারা সংবিধানকে সম্মান করে না, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদেরও না, দিল্লির শাসকদেরও না।”
