বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে তুমুল চাঞ্চল্য। একদিকে অভিনেতার মৃত্যু নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর, অন্যদিকে তাঁর হাসপাতালের কেবিন থেকে ব্যক্তিগত ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হতেই রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেওল পরিবার।ধর্মেন্দ্রর অসুস্থতা নিয়ে আগেই শুরু হয়েছিল নানা রকম জল্পনা। তার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত মিথ্যে সংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন এদিন সন্ধ্যায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় হাসপাতালের ঘরে ধর্মেন্দ্র শয্যাশায়ী, পাশে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী প্রকাশ কৌর, যিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সানি ও ববি দেওল, আর পেছন থেকে শোনা যায় কারও কণ্ঠ “একবার ঠিক করে দে রে বাবা... হে ঈশ্বর, এ কী হল!”
এই ভিডিও যে পরিবারের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তে তোলা, তা স্পষ্ট। কেউ একজন হাসপাতালের ভেতরেই গোপনে সেই ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে নেটিজেনদের ক্ষোভ উপচে পড়ে, “খুবই ভুল কাজ করেছেন যিনি এই ভিডিও তুলেছেন… পরিবার যখন শোকে ভেঙে পড়েছে, তখন এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও সংবেদনশীলতার অভাব।” কেউ লিখেছেন, “এটা খুবই ভুল। এটা তাদের ব্যক্তিগত পরিসর, কারও অনুমতি ছাড়া ভিডিও করা ঘৃণ্য।”
অন্য এক নেটিজেন সরাসরি ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালকে ট্যাগ করে লেখেন, “আপনাদের কর্মচারীরা এই কাজ করেছেন! এটা লজ্জাজনক, অপমানজনক, এবং অত্যন্ত অসম্মানজনক।”
এরপরেই আসে নতুন তথ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই হাসপাতালের তরফে শুরু হয় তদন্ত। এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের সেই কর্মীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি নাকি টাকার বিনিময়ে ও সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত হওয়ার লোভে পরিবারের এই সংবেদনশীল মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস করেছিলেন।
ইন্টারনেটজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা সকলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই নৃশংস সংবেদনহীনতার বিরুদ্ধে। সকলেরই এক কথা, “কোনও মানুষের কষ্টের মুহূর্তকে বিনোদনের উপকরণ বানানো যায় না।”
এরই মধ্যে, ২০২৫ সালের ১২ নভেম্বর সকালে ৭টা ৩০ মিনিটে ধর্মেন্দ্রকে ছেড়ে দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। দেওল পরিবারের পক্ষ থেকে পরে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, “ধর্মেন্দ্রজির চিকিৎসা বাড়িতেই চলবে। এই সময়ে আমরা অনুরোধ করছি, সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ যেন আর কোনও জল্পনা না ছড়ান এবং আমাদের গোপনীয়তাকে সম্মান করেন।” পরিবারটি আরও জানায়, তাঁরা সকলের ভালবাসা, প্রার্থনা ও শুভকামনার জন্য আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
কিন্তু এর পরদিন, অর্থাৎ এদিন ১৩ নভেম্বর, ক্যামেরার সামনে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন সানি দেওল। পরিবারের বাড়ির বাইরে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের ভিড় দেখে তিনি হাত জোড় করে অনুরোধ জানান যেন তাঁরা আর ভিডিও না করেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল তীব্র যন্ত্রণা ও রাগ-
“আপনাদের লজ্জা করা উচিত। আপনাদেরও মা-বাবা আছেন, পরিবার আছে। আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি, আর আপনারা ভিডিও তুলেছেন? একটুও লজ্জা লাগছে না?”
সানি দেওলের এই বক্তব্যই যেন আজকের বাস্তবতার প্রতিবিম্ব। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যেখানে ব্যক্তিগত শোককেও ক্লিকবেট বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে মানবিকতা যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মেন্দ্রর অগণিত ভক্ত এখন একটাই প্রার্থনা করছেন তাঁর দ্রুত আরোগ্য, দীর্ঘ জীবন, আর পরিবারের জন্য একটু শান্তি।
