আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনাল। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর আবেগ কাঁধে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামছেন হরমনপ্রীত কৌররা।
দেশজুড়ে আজ আলোচনায় শুধুই জেমিমা, স্মৃতিরা। কিন্তু প্রথম থেকে এতটা সোজ ছিল না ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের লড়াই। সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একাধিক উদ্যোগে চল বেড়েছে মহিলা ক্রিকেটের।
ম্যাচ ফি বেড়েছে, উন্নত হয়েছে মাঠের মান। রবিবার মেগা ফাইনালের আগে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক শাঁখা রঙ্গস্বামী স্মরণ করলেন সেই কঠিন দিনগুলির কথা, যখন জাতীয় দলের মহিলা ক্রিকেটারদের লড়াই শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও চলত।
রবিবার নভি মুম্বইয়ের ডি.ওয়াই. পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে তিনি স্মরণ করলেন মহিলা ক্রিকেটের সেই শুরুর দিনগুলি।
রঙ্গস্বামী যখন ভারতের প্রথম মহিলা অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে অভিষেক করেন, তখন মহিলা ক্রিকেটারদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
বোর্ডের পক্ষ থেকে তেমন কোনও সহায়তা পাওয়া যেত না। আলাদা সংস্থার তরফে চলত ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘আমরা ট্রেনের আনরিজার্ভড কামরায় ভ্রমণ করতাম, ডরমেটরির মেঝেতে ঘুমোতাম। নিজেদের বিছানা-বালিশ, ক্রিকেট কিট সব নিজেরাই বহন করতাম,’ স্মৃতিচারণায় বলেন রঙ্গস্বামী।
কিন্তু সময় বদলেছে। আজকের দিনে হরমানপ্রীত কৌরদের দল বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। রঙ্গস্বামীর কথায়, ‘এখন মেয়েরা যে সুযোগ পাচ্ছে, তা আমাদের স্বপ্নেরও বাইরে ছিল।
এটাই প্রমাণ যে কঠোর পরিশ্রম, বোর্ড ও রাজ্য সংস্থাগুলির সহায়তা—সবকিছুর সমন্বয়ে মহিলা ক্রিকেট এখন সাফল্যের শিখরে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ঐতিহাসিক জয়ের পর এখন ভারতের সামনে বিশ্বকাপ ছোঁয়ার সুযোগ রযেছে। লোরা উলফার্টের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হরমনপ্রীত কৌরের দল যদি কাপ জেতে, তা ভারতের মহিলাদের ক্রিকেটে ইতিহাস হবে।
রঙ্গস্বামী আরও বলেন, ‘আমরা যে বীজ বপন করেছিলাম প্রায় ৫০ বছর আগে, আজ তা ফল দিচ্ছে। মেয়েরা যদি এবার কাপ জেতে, তবে দেশে মেয়েদের ক্রিকেটার হওয়ার আগ্রহ দু’তিনগুণ বেড়ে যাবে।’
রঙ্গস্বামী বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রাক্তন বিসিসিআই সচিব ও বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহকে।
তাঁর নেতৃত্বে মহিলা ক্রিকেটে এসেছে বড় পরিবর্তন, বিশেষ করে ২০২৩ সালে চালু হওয়া ওমেন্স প্রিমিয়ার লিগ (WPL) মহিলা ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জয় শাহ যখন বিসিসিআই সচিব ছিলেন, তখনই তিনি একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আমি নিজে তখন বোর্ডের অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্য ছিলাম, তাই প্রত্যক্ষ করেছি তাঁর উদ্যোগের প্রভাব। আজ সেই ফলই পাচ্ছে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট’।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মহিলা ক্রিকেটাররা পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান ম্যাচ ফি পান। যা দেশে মহিলাদের ক্রিকেটে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
যদিও বার্ষিক চুক্তিতে এখনও কিছু পার্থক্য রয়ে গেছে, তবুও এখনকার প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সম্মান, সহায়তা ও স্বীকৃতি পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় মহিলা দল এর আগে দু’বার (২০০৫ ও ২০১৭ সালে) বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছেছিল, কিন্তু ট্রফি হাতে ওঠেনি।
এবার হরমনপ্রীতের দল যদি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তবে সেটা হবে ভারতীয় মহিলাদের ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক জয়।
