আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুবাইয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনাল ভারতের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠল। আইসিসি অ্যাকাডেমি গ্রাউন্ডে কার্যত একতরফা ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১৯১ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করল পাকিস্তান।

অষ্টম খেতাবের লক্ষ্যে নামা ভারত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবারেরও জন্য টেক্কা দিতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের। সব বিভাগেই এদিন পাকিস্তান এগিয়ে ছিল।

২০১২ সালে মালয়েশিয়ার কিনরারা ওভালে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে প্রথমবার অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতেছিল পাকিস্তান। ১৩ বছর পর তারা আবার খেতাব ঘরে তুলল।

অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবধানে জয়। এর আগে ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ১৯৫ রানের জয় এখনও শীর্ষে রয়েছে।

রবিবার পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দেন সমীর মিনহাসই। ৭১ বলে ঝকঝকে শতরান করে তিনি বড় স্কোরের মঞ্চ তৈরি করেন।

এরপর ফারহান ইউসুফের নেতৃত্বাধীন দল ভারতকে মাত্র ১৫৬ রানে অল আউট করে দিয়ে ২৬.২ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ শেষ করে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐতিহাসিক সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে কোচ সরফরাজ আহমেদের। ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে সাফল্যের এক বিস্ময়কর ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন তিনি।

২০০৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে ৩৮ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এরপর ২০১৭ সালে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে তাঁর নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে ১৮০ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তান।

আট বছর পর সেই সাফল্যের তালিকায় নতুন অধ্যায় যোগ করলেন সরফরাজ। এবার ডাগআউট থেকে কোচ হিসেবে। এদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান দ্রুত হামজা জাহুরের উইকেট হারায়।

কিন্তু রান তোলার গতি থামায়নি তারা। উসমান খানের সঙ্গে সমীর মিনহাস দ্বিতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের রাশ ধরে নেন। পাওয়ারপ্লেতে ৭৯ রান তুলে আক্রমণাত্মক সূচনা করেন মিনহাস।

মাত্র ২৯ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করে ১২.৩ ওভারের মধ্যেই দলকে ১০০ রানের গণ্ডি পার করান তিনি। উসমান খান ৫৬ রানে আউট হলেও গতি কমেনি।

আহমেদ হুসেনকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ১৩৭ রানের জুটি গড়ে পাকিস্তানকে বড় স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান মিনহাস। এমনকী, শতরান করার পরেও সংযম দেখাননি।

মাত্র ১০৫ বলে দেড়শো পূর্ণ করেন পাকিস্তানের এই ডানহাতি ব্যাটার। ৪৩তম ওভারে ভারতের দেবেন্দ্রনের বলে ১১৩ বলে ১৭২ রান করে আউট হন মিনহাস।

তাঁর ইনিংসে ছিল ১৭টি চার ও ৯টি ছয়। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট পড়ায় কিছুটা রান তোলার গতিতে বাধা পড়লে পাকিস্তান তোলে ৮ উইকেটে ৩৪৭ রান।

জবাবে ভারত শুরুটা ঝড়ের গতিতে করেছিল। বৈভব সূর্যবংশী প্রথম ওভারেই পাকিস্তানের প্রধান পেসার আলি রাজাকে ২১ রান মারেন।

পরে মহম্মদ সাইয়ামের বলে ক্যাচ পড়ে গেলেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১০ বলে ২৬ রান করে রাজাকেই উইকেট দিয়ে ফেরেন সূর্যবংশী।

অধিনায়ক আয়ুষ মাত্রে এদিনও রান পাননি। দু’ওভারে বিনা উইকেটে ৩২ রান তুললেও এরপরই ধস নামে ভারতের ইনিংসে। উইকেট পড়তে পড়তে এক সময় স্কোর দাঁড়ায় ৯৪ রানে ৭ উইকেট।

অ্যারন জর্জ ৯ বলে ১৪ রানের ছোট্ট লড়াই দেখালেও তা যথেষ্ট ছিল না। খিলান প্যাটেলের ১৯ রানও শুধুমাত্র ভারতের হারকে কিছুটা আটকেই রেখেছিল।

আলি রাজা ৪২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। মহম্মদ সাইয়াম, আব্দুল সুভান ও হুজাইফা আহসান প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের বড় জয় নিশ্চিত করেন।

শেষ দিকে দেবেন্দ্রন ১৬ বলে ৩৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ভারতীয় সমর্থকদের সামান্য আনন্দ দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজাই তাঁর উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন।