আজকাল ওয়েবডেস্ক: কীভাবে ম্যাচ হারতে হয় দেখিয়ে দিল গৌতম গম্ভীরের ভারত। ইডেন গার্ডেন্সে ভারত হারল ৩০ রানে। সেই সঙ্গে সিরিজেও এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশ্য এতেও কি বীরপুরুষদের লজ্জা হবে? আইপিএলের দুন্দুভি বেজে গিয়েছে। কাদের ধরে রাখা হয়েছে, কাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তা জানানো হয়ে গিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। ফলে এই সব হার ভুলে মহাতারকারা আবার আইপিএলের দিকে ঝুঁকে পড়বেন, তা বলতে আর দ্বিধা কোথায়!
ইডেনে ভারতের লজ্জাজনক আত্মসমর্পণ দেখার পরে ক্রিকেটভক্তদের চোখে ভেসে উঠছে ১৯৯৭ সালে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট। প্রায় একইরকম পরিস্থিতি ছিল সেবারও। ১২০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারতের ব্যাটিং ধসে গিয়েছিল ৮১ রানে। তখন ভারতীয় ক্রিকেটে শচীন তেণ্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, মহম্মদ আজহারউদ্দিনদের জমানা। সেই ভারত বার্বাডোজে জিততে পারেনি। ম্যাচ হেরেছিল ৩৮ রানে।
ইডেনে ভারত হারল প্রায় একই রানের ব্যবধানে। এই ভারতীয় দলে নেই বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। এই ভারত নতুন ভারত। গৌতম গম্ভীরের ভারত। যাঁরা রানির দেশ থেকে টেস্ট সিরিজ রোমাঞ্চকর ভাবে ড্র করে ফিরেছে। সেই তারাই ইডেনে দ্বিতীয় ইনিংসে তিন ঘণ্টাও ব্যাট করতে পারল না। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়েছিল সকাল এগারোটা নাগাদ। আর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হল আড়াইটা নাগাদ।
এই প্রজন্ম দেখেনি শেন ওয়ার্নের স্পিন। এখনকার প্রজন্মের মহাতারকা ব্যাটারদের সামলাতে হয়নি মুথাইয়া মুরলীধরনের মতো স্পিনারকে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাইমন হার্মার ইডেনে দৈত্য হয়ে ধরা দিলেন। কেশব মহারাজও ভেল্কি দেখালেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাঁরা কি ওয়ার্ন-কুম্বলে-মুরলীকেও ছাপিয়ে গেলেন? ভারতীয় ব্যাটাররা স্পিন ভাল খেলেন বলে সুনাম রয়েছে। সেই স্পিনের বিরুদ্ধেই তো ভারতীয়দের অয়ারাম-গয়ারাম ব্যাটিং দেখে হতবাক সবাই। ১২৪ রান করলে জিতবে এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে ভারতের যাবতীয় প্রতিরোধ শেষ হয়ে গেল ৯৩ রানে। শুরুতে ধাক্কা দিলেন ইয়ানসেন।
ভারতীয়দের মধ্যে ওয়াশিংটন সুন্দর সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন। শেষের দিকে অক্ষর প্যাটেল পাল্টা মারের খেলা শুরু করেন। দুটো ছক্কা হাঁকিয়ে বুকের উপরে চেপে বসা পাহাড়টা সরিয়ে নিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু শেষ মেশ তাঁর জন্য শেষ হাসি তোলা ছিল না।
শুভমান গিল নামতে পারবেন না, এ জানাই ছিল। তাঁকে ছাড়া দ্বিতীয় ইনিংসে খেলাটা কঠিন ছিল ভারতের পক্ষে। সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হল রবিবার। আড়াই দিনে একটা টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়ে গেল। ভারতের এই হারের পরে অনেকেই পিচকে দুষবেন। কিন্তু প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা এই পিচেই নিখুঁত ভাবে ব্যাটিং করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাইশ গজে জুজু নেই। দক্ষতাই শেষ কথা। প্রতিটি মুহূর্ত পরীক্ষা দিতে হয় টেস্ট ক্রিকেটে। সেই দক্ষতাই দেখাতে পারলেন না ভারতের ব্যাটাররা। যা হওয়ার তাই হল। ১৯৯৭-এর বার্বাডোজ ফিরল এই ইডেনে। সেদিন শচীন-সৌরভরা মাথা নীচু করেছিলেন। আজ ঋষভ পন্থ-লোকেশ রাহুলরা একই ভাবে মাঠ ছাড়লেন।
