বলিউড আজ যে হুমা কুরেশিকে চেনে-‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’-এর শক্তিশালী পারফরম্যান্স, ধারাবাহিক কাজ, একের পর এক ছবিতে সাহসী সব চরিত্রে অভিনয়, সেই অভিনেত্রীর পথচলার শুরুটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। ফিল্মি পরিবারে জন্ম নয়, বলিউডে কোনও যোগাযোগ ছিল না তাঁর। তাই যখন তাঁর জীবনে প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, তাঁর পরিবার সেই খবর শুনে উচ্ছ্বসিত তো হয়ইনি, বরং আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে হুমা জানান, তাঁর মা-বাবা প্রথমে মনে করেছিলেন, এই প্রস্তাব আসলে কোনও “প্রস্টিটিউশন র্যামকেট” অর্থাৎ যৌনচক্রের ফাঁদ! হাসতে হাসতেই হুমা বলেন, “আমার বাবা-মা বিশ্বাসই করেনি। ওরা ভেবেছিল, ‘তোমাকে কেন কেউ কাস্ট করবে?’ ওদের কাছে এটা ছিল একেবারে অবিশ্বাস্য। তারা নিশ্চিত ছিল এটা কোনও যৌনচক্রের অংশ।”
বাইরের কারও কোনও পরিচয় নেই, কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই, এমন একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের কাছে একেবারে হঠাৎ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসা নিঃসন্দেহে সন্দেহ তৈরি করার মতোই। তাও আবার এমন এক ইন্ডাস্ট্রি, যাকে পরিবার তখন দূর থেকে দেখে গ্ল্যামার, অনিশ্চয়তা আর বিপদের ককটেল। তবে পরিবারের সেই সংশয়কে পাশ কাটিয়ে হুমা নিজেই এগিয়ে যান। তাঁর কৌতূহল, স্বপ্ন আর নিজের ওপর আস্থা তাঁকে ঠেলে দেয় প্রোডাকশন অফিস পর্যন্ত। সেখানে পৌঁছে তিনি চিত্রনাট্য পড়েন এবং পরদিনই তাঁর কাছে স্ক্রিন টেস্টের জন্য ডাক আসে।
কিন্তু এখানেই ঘটে প্রথম বড় ধাক্কা! যে ছবির জন্য তাঁকে নেওয়ার কথা ছিল, সেই ছবিটিই আর বানানো হল না। হুমার কথায়, “ওই ব্যাপারটা আমাকে খুব দুঃখ দিয়েছিল। নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে পা দিচ্ছি, নিজের প্রমাণের সুযোগ খুঁজছি আর সেখানেই প্রথম অভিজ্ঞতাই এমনভাবে থেমে গেল।”
এটাই ছিল তাঁর জন্য বলিউডের বাস্তব চিত্র -অনিশ্চয়তা, অপ্রত্যাশিত বাঁক, কখনও আশা জাগানো সুযোগ, আবার কখনও হঠাৎ বন্ধ দরজা।
তবু সেই হতাশা তাঁকে থামাতে পারেনি। অডিশন, ছোট কাজ, স্ট্রাগল -সব মিলিয়ে একদিন তাঁর জীবনে আসে অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অভিনয় যাত্রার নতুন অধ্যায়।
আজ হুমা কুরেশি নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন -অভিনয়, স্ক্রিন-প্রেজেন্স, শক্তিশালী চরিত্র, সব মিলিয়ে তিনি বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ। কিন্তু তাঁর যাত্রা মনে করিয়ে দেয়, স্বপ্নে পৌঁছতে গিয়ে কখনও কখনও সবচেয়ে কঠিন লড়াইটা হয় নিজের বাড়ির অন্দরেই।
