আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিরাট কোহলি কি খেলাটা দেখছেন? নিশ্চয়ই দেখছেন, তাঁর হাত ধরে উঠে আসা যে ক্রিকেটার আজ বিশ্ব কাঁপাচ্ছে, তাঁর হাত ধরে ওঠা ক্রিকেটারকে প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার যখন ‘ওয়ারিয়র’ বলে সম্বোধন করছেন, সেই বোলারের একটা স্মরণীয় স্পেল কি না দেখে থাকতে পারেন? হাতে ৩৫ রান নিয়ে ওভাল টেস্টের পঞ্চম দিনের প্রথম ঘণ্টায় মহম্মদ সিরাজ যে স্পেলটা করলেন তাতেই চুরমার হয়ে গেল ইংল্যান্ড। সিরাজের বলটা অ্যাটকিনসনের স্টাম্প ছিটকে দেওয়া মাত্রই উল্লাসে মেতে উঠল গোটা ওভাল। আর সিরাজ? তিনি তাঁর চেনা রোনাল্ডোর সিউউউ সেলিব্রেশনের আগে ছোট্ট ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন আমি তো আছি, চিন্তা কীসের? সতীর্থদের জড়িয়ে ধরলেন, করজোড়ে ধন্যবাদ জানালেন সমর্থকদের।

পাঁচ উইকেট নিয়ে বলটা দর্শকদের দিকে দেখিয়ে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, এটা তোমাদের জন্যই। রবিবার রাতে চতুর্থ দিনের খেলা চলাকালীন সিরাজেরই সামান্য ভুলে ম্যাচ পুরোপুরি ঘুরে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের দিকে। বাউন্ডারি লাইনে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলে ছয় করে দিয়েছিলেন। তারপর রুট আর ব্রুক মিলে যেভাবে ধ্বংসলীলা চালালেন আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সকলেই। সেই সিরাজই হয়ে উঠলেন পঞ্চম দিনের হিরো। শুধুমাত্র এদিনই ২৮ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়েছেন তিনি। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা সিরিজে প্রায় ১১০০-কাছাকাছি বল করেছেন তিনি। ‘ওয়ার্কলোড’ শব্দটায় যে সিরাজ কোনওভাবেই বিশ্বাস করেন না তা আরও একবার সাফ হয়ে গেল।

‘ওয়ার্কলোড’ আবার কী? দেশের প্রতিনিধিত্ব করছো, যতক্ষণ দম আছে, সেবা করে যাও, সেই মন্ত্রেই চলেন ভারতের মিঁয়াভাই, হায়দরাবাদের ডিএসপি স্যার। একটানা নিজের ১০০% দিয়ে বল করে গিয়েছেন সিরিজ জুড়ে। উইকেট না পেলেও এক মুহূর্তের জন্যও হাঁপাতে দেখা যায়নি। এই চেষ্টার ফল তিনি পেলেন শেষ টেস্টের শেষ দিনে। চলতি সিরিজের লিডিং উইকেট টেকার হিসেবে শেষ করলেন তিনি। লর্ডসে শেষ মুহূর্তে আউট হয়ে বসে পড়েছিলেন পিচের মধ্যেই। এদিন তিনি মাঠ ছাড়লেন মাথা উঁচু করে, এক হাতে স্টাম্প আর এক হাতে ফাইফারের বল নিয়ে। ওভালে জেতার জন্য ৩৫ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ভারতের জেতার জন্য প্রযোজন ছিল চার-চারটি উইকেট। ভারতের সুযোগ কম। বরং ইংল্যান্ড অ্যাডভান্টেজে বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। কিন্তু মহম্মদ সিরাজ অন্যকিছু হয়তো ভেবে রেখেছিলেন। দিনটা তাঁর। ওভাল টেস্টে লেখা থাকবে তাঁর নাম। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা শুরুতেই রান দিয়ে দিলেন একগাদা।

সিরাজ বল হাতে ফেরালেন স্মিথকে। তার পরে ওভারটন। অন্যদিকে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অ্যাটকিনসন। তিনি মারমুখী। এদিকে কৃষ্ণর ইয়র্কারে উইকেট ভাঙল টংয়ের। অ্যাটকিনসনের উইকেট ভেঙে ব্রিটিশ-ভূমে নতুন এক রূপকথা লিখলেন সিরাজ। ম্যাচের পর জানিয়ে গেলেন, ‘নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল, ঘুম থেকে উঠে ভেবেছি ম্যাচ নিয়ে। আমার ফোনে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ‘বিলিভ’ লেখা একটা ওয়ালপেপার রয়েছে। সেটাই আমাকে বিশ্বাস জুগিয়েছে। চেষ্টা করে গিয়েছি, ঠিক জায়গায় বলটা রেখে যাওয়ার। তাতেই কাজ হয়েছে’। কে বলবে, তিনি জশপ্রীত বুমরাহর ছায়ায় ঢেকে থাকেন। যদি একজনকে বাদ দিতে হয়, তাহলে সবার আগে কোপ পড়বে তাঁর উপরেই। তবুও তিনি দেশের জন্য নিয়োজিত এক প্রাণ। সর্বশক্তি দিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিন তিনি পার্শ্বনায়ক থেকে মহানায়ক। সিরাজের মূর্ছণায় ওভালে বেজে উঠল জনগণমণ ধ্বনি। আজ জনগণমনের অধিনায়ক একজনই। তিনি মহম্মদ সিরাজ।